২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

রুপাতলীতে শিক্ষার্থী-শ্রমিক সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, বাস কাউন্টার ভাংচুর

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১২ পূর্বাহ্ণ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরিশালে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিক এবং ববি শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে একটি অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়। বুধবার সন্ধ্যার ‍ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছে তিনজন, তাদের মধ্যে গুরুতর আহত এক জনকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে।

আহতরা হলেন, কাউন্টার ক্লাক মো. সালাম দেওয়ান, বাস কন্ডাক্টর শাহীন ও পরিবহন শ্রমিক আল-মামুন। তবে সন্ধ্যা সাতটায় সংঘটিত হওয়া এ সংঘর্ষের ব্যাপারে পাওয়া গেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। ‍

এদিকে ফের ‍এমন ঘটনা ঘটলে বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন ‍এক পরিবহন নেতা।

সংঘর্ষের মুহূর্তে ওই এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, দূরপাল্লার যাত্রীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিকবিদিকশুণ্য হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে আটটায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সম্মুখভাগে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার প্রতিবাদে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

আহত সেলিম দেওয়ান জানান, ‘মাগরিবের নামাজের পর আমি এবং আল-আমীন রূপাতলীস্থ লেবুখালী-বাকেরগন্জের অস্থায়ী টিনের কাউন্টারে ডিউটির জন্য বসি। হঠাৎ ১০ থেকে ১৫ জন ছেলে এসে ভার্সিটির শিক্ষার্থী পরিচয়ে কাউন্টার বন্ধ করতে বলে। কেন বন্ধ করবো প্রশ্ন করতেই সবাই একযোগে আমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং পুরো কাউন্টার ভেঙে চুরমার করে দেয়’।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ‘সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বিসিসি ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদের কার্যালয়ে যায়। তার সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। তারপর আকস্মিকভাবে সুলতান মাহমুদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবার পথে লেবুখালি-বাকেরগন্জ অস্থায়ী টিকিট কাউন্টারে ভাঙচুর চালায়। এসময় পরিবহন শ্রমিকেরা একজোট হয়ে তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিপদ এড়িয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে ঘটনার প্রত‍্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ সিফাত জানান, ‘কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর সাথে বাসের ড্রাইভার ও কর্মচারীরা খারাপ ব‍্যবহার করে। ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষণিকভাবে আমি রূপাতলী যাই এবং ঘটনার প্রতিবাদ করি। কিন্তু তারা আমার সাথে খুব খারাপ ব‍্যবহার করে এবং আমাকে বাস মালিক সমিতির অফিসে নিয়ে যায়। আমার বন্ধু ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে রূপতলী এসে ঘটনার প্রতিবাদ জানায়’।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের খারাপ আচরণ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, স্টপেজে বাস না থামানো সহ আরো অসহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফজলুল হক রাজিব জানান, ‘বিকালে জানতে পারি বাসের ড্রাইভার ও কর্মচারীরা কয়েকজন মেয়ের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করে এবং ঘটনার প্রতিবাদ করায় আহমেদ সিফাতের সাথেও খুব খারাপ ব‍্যবহার করে । ঘটনাটি শুনে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে রূপতলী এসে এ ঘটনার প্রতিবাদ করি।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদে রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। প্রায় দুই ঘন্টার অবরোধের ফলে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে আবদুর রব সেরনিয়াবাত ব্রিজের দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘সড়ক অবরোধের কথা শুনে আমি সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে যাই। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আপাতত অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। সামনে আমরা আলোচনায় বসে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে যাবার চেষ্টা করবো’।

এদিকে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যাবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক অন্যসুরে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী শিক্ষার্থী টোল ফ্রি অটো সার্ভিসের নামে বিভিন্ন মাহেন্দ্রাকে মহাসড়কে চলার পারমিট ব্যাবসা পরিচালনা করে। মহাসড়কে অটো-মাহিন্দ্রা চলা বেআইনি তাই নিজস্ব চেকপোস্টের মাধ্যমে আমরা অটো-মাহিন্দ্রার চলাচল নিষিদ্ধ করেছি। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু মাহিন্দ্রার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দাবি নিয়ে আলোচনায় বসে। আমরা সেটা না মানলে তারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়।’

পুনরায় এমন কোনো ঘটনা ঘটানো হলে পুরো বিভাগ জুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেন এই পরিবহন নেতা। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগামী সপ্তাহে দুপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার কথা বলেছেন। তাঁর আশ্বাসে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত আছে। বিসিসি মেয়র আহত পরিবহন শ্রমিকদেরও সার্বিক খোঁজ খবর নিয়েছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম মানিক।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন