২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

রেস্তোরাঁয় ‍মিলবে কৃত্রিম মাংস: মানুষ খেতে পারবে কী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৬ অপরাহ্ণ, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

রেস্তোরাঁয় ‍মিলবে কৃত্রিম মাংস: মানুষ খেতে পারবে কী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: খাবারের তালিকায় খুব শিগগিরই যোগ হতে পারে গবেষণাগারে তৈরি মাংস। এই মাংস উৎপাদন নিয়ে কাজ করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বড় অগ্রগতি পেয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যাবে কৃত্রিম এই মাংসের স্বাদ।

গবেষণাগারে তৈরি মাংসের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এই মাংস উৎপাদনে জীবন্ত পশুপাখির কোনো ক্ষতি করা হয় না। মাংস উৎপাদনে প্রথমে গবাদিপশুর শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয়। তারপর স্টিলের বড় বড় কনটেইনারে রেখে সেই কোষে সরবরাহ করা হয় পুষ্টি উপাদান। একপর্যায়ে সেগুলো আসল মাংসের মতো স্বাদযুক্ত বস্তুতে পরিণত হয়।

এই মাংসের চল আপাতত রেস্তোরাঁয় শুরু করার চিন্তা থাকলেও ভবিষ্যতে বড় পরিসরে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে উৎপাদনকারীদের। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখছে তারা। মাংস সাশ্রয়ী দামে ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন বিপুল বিনিয়োগ। আর ভোক্তারা যেন দ্বিধা কাটিয়ে এই মাংস খেতে আগ্রহী হন, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।

এখন পর্যন্ত শুধু সিঙ্গাপুর খুচরা পর্যায়ে গবেষণাগারে তৈরি মাংস বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। একই পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রও। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আপসাইড ফুডসের তৈরি মুরগির মাংস মানুষের জন্য নিরাপদ বলে গত নভেম্বরে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)।

আপসাইড ফুডসের ইচ্ছা, চলতি বছরেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁগুলোতে গবেষণাগারে তৈরি মাংস সরবরাহ করবে। আর খুচরা পণ্যের দোকানে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে ২০২৮ সাল নাগাদ। তবে আপাতত এফডিএর অনুমোদন পেলেও আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে আপসাইড ফুডসকে। পণ্য বাজারে আনতে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের অনুমতিও নিতে হবে।

‘পশু জবাই ছাড়াই মাংস’>> আপসাইড ফুডস কৃত্রিম এই মাংস তৈরি করে ক্যালিফোর্নিয়া এমেরিভিল শহরের একটি কারখানায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গবেষণাগারের পোশাক পরে কাজ করছেন বহু কর্মী। বিশাল আকৃতির সব পাত্রে রাখা হয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান মিশ্রিত পানি। অনেকে সেগুলোর দেখভালে ব্যস্ত। আলাদা একটি কক্ষে মাংস উৎপাদন করা হয়। আপসাইড ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উমা ভালেতি ওই কক্ষটিকে বলেন, ‘জবাই ছাড়া মাংস উৎপাদনের ঘর।’

প্রশ্ন উঠতে পারে, গবেষণাগারে তৈরি মাংসে কি আসল মাংসের মতো স্বাদ পাওয়া যাবে? এমেরভিলে কারখানাটি সফরে যাওয়া সাংবাদিকদের ওই মাংস রান্না করে খেতে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের ভাষ্যমতে, কৃত্রিম মাংসের স্বাদ আসলের মতোই। তবে এই মাংস তুলনামূলক কম পুরু। আর কাঁচা অবস্থায় রংটাও একটু বেশি তামাটে ধরনের।

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ারই আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘গুড মিট’ এফডিএর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংস্থাটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ‘মোসা মিটস’ ও ইসরায়েলভিত্তিক ‘বিলিভার মিটস’-ও। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, অনুমোদন পাওয়ার পরও তাঁদের অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।

গবেষণাগারে তৈরি এই মাংস পরিবেশবান্ধব হওয়ায় তা নজর কেড়েছে জনপ্রিয় আর্জেন্টাইন রাঁধুনি ফ্রান্সিস ম্যালমানেরও। তিনি মনে করেন, এই মাংস অবশ্যই মানুষ খাবে। তবে রান্নার সময় শুধু একটু ‘ভালোবাসা মিশিয়ে’ দিতে হবে।

তাঁদের ভাষ্য, কৃত্রিম মাংস সহজলভ্য করার জন্য তা ব্যাপক হারে উৎপাদনে নামতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোষগুলোকে মাংসে পরিণত করার জন্য পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া এবং বেশি বেশি মাংস উৎপাদনের কনটেইনারের ব্যবস্থা করা। এ জন্য প্রয়োজন বিপুল বিনিয়োগ। তাই বলতে গেলে বিনিয়োগ না পেলে বড় পরিসরে মাঠে নামা সম্ভব নয়।

উত্তর আমেরিকাভিত্তিক মাংস ব্যবসায়ীদের সংগঠন নর্থ আমেরিকা মিট ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত হিসাব বলছে, ২০২১ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গবাদিপশু ও পোলট্রি খাত থেকে ১০ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড মাংস উৎপাদন করা হয়েছে। এর তুলনায় আপসাইড ফুডসের মাংস উৎপাদনক্ষমতা অনেক কম। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বছরে মাত্র চার লাখ পাউন্ড উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

মানুষ খাবে তো >> কৃত্রিম মাংস উৎপাদনকারীদের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। এ নিয়ে নানা পরিকল্পনা এঁটেছে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, এই মাংস উৎপাদনে কোনো পশুপাখি জবাই করা লাগবে না—এটা মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে। এমনকি পশু হত্যার বিরুদ্ধে গিয়ে যাঁরা মাংস খান না, তাঁদের কাছেও এই মাংস গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

আরেকটি বিষয় হলো, গবেষণাগারে তৈরি মাংস পরিবেশের ওপর চাপ কমাতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাব অনুযায়ী, গবাদিপশু লালনপালনে প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়। এর পরিমাণ বিশ্বে মোট নির্গত হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

কৃত্রিম মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটুকু, তা জানতে ২০২২ সালে একটি গবেষণা চালিয়েছিল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্ট সাইকোলজি। সেখানে দেখা গেছে, যাঁরা মাংস খান তাঁদের ৩৫ শতাংশের কৃত্রিম মাংস খেতে রাজি নন। এমনকি নিরামিষাশীদের ৫৫ শতাংশেরও এই মাংস নিয়ে ইতিবাচক ধারণা নেই।

এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিদ জ্যানেট তোমিয়ামা বলেন, ‘অনেক মানুষেরই গবেষণাগারে তৈরি মাংস নিয়ে আপত্তি নেই। তবে অনেকেই আছেন এই মাংসকে অপ্রাকৃতিক বলে মনে করেন। কৃত্রিম মাংস খাওয়ার আগে থেকেই তাঁদের মনে একটি নেতিবাচক ধারণা আছে।’

কৃত্রিম মাংস গবেষণাগারে কীভাবে তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলো কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে ভোক্তাদের স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন গুড মিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা জোশ টেট্রিক। তিনি বলেন, এই মাংস মুখরোচক। এরপরও উৎপাদনকারীদের এ নিয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে।

গবেষণাগারে তৈরি এই মাংস পরিবেশবান্ধব হওয়ায় তা নজর কেড়েছে জনপ্রিয় আর্জেন্টাইন রাঁধুনি ফ্রান্সিস ম্যালমানেরও। তিনি মনে করেন, এই মাংস অবশ্যই মানুষ খাবে। তবে রান্নার সময় শুধু একটু ‘ভালোবাসা মিশিয়ে’ দিতে হবে।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন