২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

র‌্যাবের হাত থেকে সস্ত্রাসীকে বাঁচাতে নলছিটি পুলিশের আটক নাটকীয়তা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, ০৫ মার্চ ২০১৭

ঝালকাঠির নলছিটি শহরের সেই চিহ্নিত সন্ত্রাস রেজাউল চৌধুরীকে রাতের আঁধারে ছেড়ে দিয়ে দিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে ভয়ার্ত এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনি কোন পদক্ষেপ না রাখায় শীর্ষ কর্মকর্তারাও বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। যে বিষয়টি রোববার ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় অবস্থা সৃষ্টি হয়।

বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন গোটা বিশ্ববাসী। বিশেষ করে দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়ার সংবাদিক সিডনি প্রবাসী ফজলুল হক বারী এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রেজাউলকে গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে রোববার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ওই স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্টের বণ্যা বয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকরা অপরাধী রেজাউল চৌধুরীকে আইনের আওতায় নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিষাদগার করেছেন ঝালকাঠি জেলা পুলিশের কর্মরত কর্মকর্তাদের।

এই ধরনের ভয়ানক সন্ত্রাস রাতের আঁধারে কিভাবে পুলিশের খাঁচা থেকে বেড়িয়ে আসে তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের। নলছিটি শহরের বাসিন্দা জলিল চৌধুরীর ছেলে রেজাউলকে ছেড়ে দেয়া নিয়ে এলাকায়ও ঢের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে এই প্রসঙ্গটি এলাকার সুশিল সমাজকে ভাবিয়ে তুলছে। এক্ষেত্রে অনেকের অভিব্যক্তি হচ্ছে, সন্ত্রাসী রেজাউলকে নিয়ে পুলিশ একটি নাটকীয় খেলা খেলেছে।

সন্ধ্যারাতে আটক খবর মধ্যরাতে ছেড়ে দেয়া একটি নাটকীয় পর্বই বলা চলে। সূত্রমতে বোরকা পরিহিত এক কিশোরীকে রাস্তায় আটকে টানা হেচড়ার  একটি স্থিরচিত্র শনিবার সকাল নাগাদ ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। নলছিটি শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাস রেজাউল চৌধুরীসহ আরও ৪ জনকে ওই স্থিরচিত্রে ভয়ানকরুপে দেখা যায়। যার মধ্যে রমিজ ওরফে বোমা রমিজের কাছে একটি পিস্তলও ছিল।

সেই ফেসবুক তথ্য নিয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল বরিশালটাইমস একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার লাইক কমেন্টের ঝড় যায়। একপর্যায়ে বরিশাল র‌্যাবের টিম যুব বয়সী রেজাউলের পরিচয় নিশ্চিত হতে অগ্রসর হয়। অবশ্য একটি টিম নলছিটি শহরে বিকেল নাগাদ অবস্থানও নিয়েছিল।

এক্ষেত্রে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন ফেসবুকে ফাঁস হওয়া ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস রেজাউল এবার র‌্যাবের খাঁচায় যাচ্ছে। কিন্তু এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতা পৌরসভা চেয়ারম্যান তসলিম চৌধুরী নেপথ্যে থেকে থানা পুলিশকে প্রভাবিত করে রেজাউলকে আটকে একটি নাটক তৈরি করে। এই তসলিম চৌধুরী ও রেজাউল চৌধুরী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যে কারণে রেজাউলের পক্ষে এতবড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুকের স্কুলছাত্রীর নির্যাতনের স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর র‌্যাবের একটি টিম নলছিটিতে প্রবেশ করে।

মূলত এতেই পরিস্থিতির বেগতিক ভেবে সন্ত্রাসী রেজাউলকে কৌশলে নলছিটি থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক জামাই আদরে নিয়ে যায়। এদিকে র‌্যাব রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে চলে আসলে মেয়রের নির্দেশনায় এক কাউন্সিলর পুলিশের সাথে আতাত করে তাকে নিয়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন ওই মহলটি রেজাউলকে র‌্যাব খুঁজছে এমন খবর নিশ্চিত হয়ে থানা পুলিশকে নিয়ে আটকে একটি নাটকীয় পর্ব রাখলেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন, রেজাউলকে আটক করা হয়েছিল।
কিন্তু কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তাছাড়া নির্যাতিত ওই বোরকা পরিহিত তরুণীকে সেসম্পর্কে কোন তথ্য আসেনি। যে কারণে তাকে রোববার দিন সকালে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জোবায়দুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে অনেকের অভিব্যক্তি হচ্ছে একজন চিহ্নিত অপরাধীকে আটক পরবর্তী কিভাবে পুলিশ ছেড়ে দিল তা ভাবার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও জেলা পুলিশ সুপারের এই প্রশ্নের প্রেক্ষিত্রে সোজাসাপটা উত্তর হচ্ছে, অভিযোগকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া নির্যাতনের ঘটনাটি অনেক আগের।

সে কারনে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে এসপি’র এমন অভিব্যক্তির যৌক্তিক নয় বলে মত দিয়েছেন আইনবিদরা। তাদের মতে, অপরাধ বা অপরাধী যে সময়ই অপরাধ করুক না কেন প্রকাশ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়াটা আইন পরিপন্থি। এক্ষেত্রে ভিকটিমকে না পাওয়া গেলেও পুলিশ যথাযথ আইনে মামলা করার ইখতিয়ার রাখে। কিন্তু এতবড় বিষয়টি ঝালকাঠি জেলা পুলিশ কেন এড়িয়ে গিয়ে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ায় তা আইনজীবীদেরও হতাশ করেছে।’’

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন