২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

লকডাউন-ত্রাণ তৎপরতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪০ অপরাহ্ণ, ১১ মে ২০২০

এসএম মনিরুজ্জামান:: পরিবার হলো পৃথিবীর আদি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে সমগ্র বিশ্ব পরিবারের সূত্রপাত। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে আজ সমগ্র বিশ্ব একই সূত্রে গাঁথা। লকডাউন, লকডাউন এবং লকডাউন সে হিসেবে বিশ্বের দুই শতাধিক রাষ্ট্র একই অজানা আতংকে লকডাউনের কবলে। কে কখন আক্রান্ত হবে কেউ জানে না। বিশ্বের সকল উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল দেশে নিজস্ব আঙ্গীকে মহামারী থেকে পরিত্রানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। লকডাউন এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে জীবন। কঠোর ভাবে জনগনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও থেমে নেই মানুষের চলাচল। লকডাউন, হোম কোয়ারান্টাইন আর আইসোলেশন এ বিষয়গুলো বুঝাতেই সরকারের গলদঘর্ম হচ্ছে। হায়রে পোড়া কপাল আমাদের। লকডাউন, লকডাউন বলে সরকারের সকল মহল বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, এমনকি এ করোনা যুদ্ধে নিজের প্রান বিপন্ন করে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রচারনা জনগণকে সচেতন করার জোর প্রচেষ্টা চোখে পরার মতো। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সমগ্র বিশ্ববাসী দেখছে। সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবিদার। গর্বে বুকটা ভরে উঠে। বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসন মূলত তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের দিয়েই পরিচালিত হয়। মূলত সরকারের নির্দেশিত কাজের বাস্তবায়ন করাটাই জনপ্রতিনিধিদের মূখ্য কাজ। আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ মূলত সরকারের পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটাতে নির্দেশিত পথে চলতেই বাধ্য। কিন্তু বাস্তবতা অন্য রকম। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পরই নিজেকে অন্য রুপে নিজের আবির্ভাব ঘটান।

এ প্রসঙ্গে অনেক রসাত্মক গ্রামীণ প্রচলিত কথা রয়েছে। সে কথা না হয় নাই বলি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার পূর্ব নির্ধারিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মহামারীর সময়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন। করোনা মহামারীর প্রাক্কাল্লে জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণ নিয়ে অভিযোগের যেন সীমা নেই। লকডাউন এর জন্য কর্মমূখী মানুষ কাজ করতে পারছে না, আপন কালীল সহায়তা হিসেবে সরকার সহায়তা করছেন কিন্তু একটা শ্রেণি তাও আত্মসাৎ করছেন। বরাদ্দকৃত চালের চেয়ে মাপে কম দেয়া। বস্তায় বস্তায় চাল আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এটা কেমনতর ভাবে মেনে নেয়া যায়? অবশ্য বেশ কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চেয়ারম্যান, মেম্বরদের বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো টি আর, কাবিখা, কাবিটা, সংস্কারমূলক কাজে জনগণ তো এতটা খোঁজ রাখতে যায় না। যেমন খুশী তেমন করো নীতিতে চলে কিন্তু এ করোনা কালে সামান্য বরাদ্দ টুকু যথাযথ বন্টন করলে তাতে করে এমন কি ক্ষতিটা হতো?

অন্তত সামাজিক জীব হিসেবে নীতি নৈতিকতার পরিচয়টা দেয়া যেত। যেখানে ছাত্র, যুবা, বৃদ্ধ, থেকে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেখানে জনপ্রতিধিদের এমন গর্হিত কাজ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যার যার অবস্থান থেকে এ ক্রান্তিলগ্নে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে যাহা কিছুটা হলেও মানুষের উপকারে আসছে, কিন্তু সেখানে ত্রাণের নামে সেলফি প্রতিযোগিতা খুবই দুখঃজনক বিষয়। লকডাউন এর কারণেই হয়তো কাজ করতে পারছে না তাই সাময়িক সমস্যা তবে তারা তো আর ভিক্ষুক নয়। তাঁদেরও একটা আত্মমর্যাদা রয়েছে। তাঁরাও কোন একটা সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ।

সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ কারো ব্যক্তি সম্পত্তি নয়। এ বিষয় টি সাধারণ জনগণ এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারেনি। হয়ত এ বিষয় বুঝাতেও গণমুখী প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক বিষয় আছে যা যতটা গোপন রাখা যায় একটা শ্রেণির জন্য ততটা ভালো। কারন হাটে হাঁড়ি ভেঙে গেলে সর্বনাশ।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিধানমতে সরকারি ত্রাণের মালিক জনগণ। যে টাকায় সরকারি আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারী বেতন ভাতা গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। সে একই টাকায় সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ তৎপরতায় জনগণের সংকোচবোধ মোটেই ঠিক নয়। কারন জনগণই মূলত সরকার। এ অব্যবস্থাপনার পরিত্রাণ হওয়া দরকার। জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করার এখনই উপযুক্ত সময়। প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। যার যার অবস্থান থেকে হাত বাড়িয়ে দিলে আঠার কোটি মানুষের দেশে কোন মহামারী ই কোন প্রতিবন্ধকতা তেরি করতে পারবে না। কেবল মাত্র একটি উদ্যোগ একটি সমাজের চিত্র পরিবর্তন করে দিতে পারে। আমরা কেহই এ দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারিনা।  একদিন পরিবর্তন আসবে সমগ্র বিশ্বে কেহই হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে না, শুধু এ মহামারীর সময়ে বাস্তবতা তাকে ভাবিয়ে তুলবে। আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠবে প্রতিটি মানুষ ।

কলাম লেখক
@ s.moniruzzaman99@gmail.com

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন