১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

লাল সবুজের দিন, আজ ২৬ মার্চ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৯ অপরাহ্ণ, ২৫ মার্চ ২০১৯

উত্তম চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিবেদক:: ‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’

সত্যিই এসেছে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। কিন্তু বাঙালী জাতিকে এ জন্য দিতে হয়েছে চরম মূল্য। নিত্যদিনের মতো আজও ভোরের সূর্যালোকের বর্ণচ্ছটায় রাঙাবে কৃষ্ণচূড়া, গেঁয়ো পথের শেষে নদীতীরের অশ্বত্থ শাখা থেকে ভেসে আসবে কোকিলের কুহুতান, দূর-দূরান্ত থেকে শ্যামল প্রান্তরে আজ বাজবে রাখালিয়ার মনকাড়া বাঁশির সুর, নীল আকাশের বুকে ডানা মেলবে উড়ন্ত বলাকার ঝাঁক, কলকাকলিতে মুখরিত হবে জনপদ। তবুও অন্য যে কোন দিনের চেয়ে আজকের দিনটি সম্পূর্ণ আলাদা। ভিন্ন আমেজের, ভিন্ন অনুভূতি ও ভিন্ন সাধের আমাদের এই প্রিয় স্বাধীনতা দিবস। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গৌরবের স্মৃতি নিয়ে আবারও ফিরে এসেছে চির অম্লান, আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত এ দিনটি।

আজ ২৬ মার্চ। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন। বাঙালীর শৃৃঙ্খলমুক্তির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালীর দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনা পর্ব। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা উড়ানোর দিন আজ।

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ’৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালী। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্রযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এ বদ্বীপের মানুষ। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে।

ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ’৭১ সালের ২৬ মার্চ। ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতর দিয়ে রক্তরাঙা সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কু-লী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লালসবুজ পতাকা। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।

একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশন্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালী। দীর্ঘ ন’মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা!

আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমলে উৎসবের দিন। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এ ভূভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর হাজার বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস- মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিন। বাঙালীর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।

স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকীতে এবার সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। বাঙালী জাতির দীর্ঘ চার দশকের দাবি পূরণ হয়েছে, বড় বড় কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসির রজ্জুতে। জেলখানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে মানুষরূপী কিছু নরপশু, যাদের ফাঁসির দ- কার্যকরের দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সকল প্রার্থীকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বীর বাঙালী। একটি আসনেও তাদের জিততে দেয়নি স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালী জাতি। আর জামায়াতের সখ্য বিএনপিকেও জনগণ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে। যাত্রা শুরু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত জাতীয় সংসদ।

যে একটি মাত্র বর্জ্রকঠিন ভাষণে নিরস্ত্র বাঙালী জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই দেশবাসী এক ভিন্ন মেজাজে এবার স্বাধীনতা দিবস পালন করবে।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশ যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, সব সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দেশটি যখন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়ক ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ঘাপটি মেরে থেকে নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না পরাজিত শত্রুরা। তাই উন্নয়নের চাকা স্তব্ধ করে দিতে পরাজিত শত্রুদের গোপন ষড়যন্ত্রেরও কমতি নেই।

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বুঝতে পেরেছে তাদের অস্তিত্বই এখন সঙ্কটের মুখে। বর্তমান সরকার যেভাবে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে শক্তহাতে জঙ্গী-সন্ত্রাস দমন করা হচ্ছে, এভাবে চললে বাংলাদেশে অপশক্তির মূল শেকড় উৎপাটনে আর বেশিদিন লাগবে না। এ কারণেই তারা শেষ কামড় দিতে চাইছে। শান্ত দেশকে অশান্ত করতে দেশের নানাস্থানেই তারা নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করছে। রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ একটি গোষ্ঠী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই অন্ধকারের শক্তিকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র-অর্থ দিয়ে জঙ্গীবাদ উস্কে দিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের দোসর কয়েকটি রাষ্ট্র।

এ অবস্থায় বসে নেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোটি কোটি মানুষ। তারাও রাজপথে নেমে এসেছে যেকোন মূল্যে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে। তাই বাঙালী জাতি নতুন উদ্দীপনায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তি জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত। চারদিকে পরাজিত শত্রুর দোসরদের পুনর্বার পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে সোচ্চার জাতি। সব যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে জাতি জানিয়ে দেবেÑ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কখনও তামাদি হয় না।

ফ্লাশব্যাক একাত্তর ॥ কোন হুইসেল বা সৈনিকের ঘোষণায় নয়, এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালীকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালী। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ’৬৯। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর, জনপদ।

শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালী নিধনযজ্ঞে। তবে, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিক-নির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।

কিন্তু বাঙালীর আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষা নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাক সেনা। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাক বাহিনী ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করে দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।

২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন, এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর এই ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশের অকুতোভয় সন্তানরা তুমুল যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মাথা নত করে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা- যার নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

যাদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা, তাদের কাছে মহামূল্য ঋণ, গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর বেদনায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের। দৃপ্ত শপথ নেবে- জঙ্গী-সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ।

সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান এ দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান প্রধান সড়কে উড়বে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত হবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারী ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বেতার, টেলিভিশন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

পথে পথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাঙালীর কণ্ঠে উচ্চারিত হবে- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে, ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই…।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন