২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শীঘ্রই চালু হচ্ছে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-চট্টগ্রাম উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৭ অপরাহ্ণ, ২২ জুন ২০২১

শীঘ্রই চালু হচ্ছে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-চট্টগ্রাম উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-চট্টগ্রাম উপকূলীয় নৌপথে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহরে পরে আগামী আগস্টে যাত্রী পরিবহন শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে প্রায় ১০ বছর পরে দেশের একমাত্র উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি পুনর্বহাল হতে যাচ্ছে। নতুন এ সার্ভিসের মাধ্যমে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর ছাড়াও বিচ্ছিন্ন জেলর ভোলা এবং দ্বীপ উপজেলা হতিয়া সরাসরি নিরাপদ নৌযোগাযোগে সংযুক্ত হবে।

নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪ বছর পরে সম্প্রতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটসি) বহরে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের এ দুটি উপক’লীয় নৌযান যুক্ত হয়েছে। এসব নৌযানের পাশাপাশি ২০০২ সালে চীন থেকে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলিয়া’ নামের নৌযানটির পুনর্বাসন কাজও আগামী মাসের মধ্যে শেষ হলে এসব নৌযানের মাধ্যমে সপ্তাহে অন্তত ৩দিন বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-চট্টগ্রাম রুটে উপক’লীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটি চালু হবে বলে সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মেনী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশাল-নারায়গঞ্জ ও বরিশাল-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটি উপক’লীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে। ওই সব নৌযানের মধ্যে ‘এমভি মনিরুল হক’ ও ‘এমভি আবদুল মতিন’ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পুনর্বাসনও করা হয়। কিন্তুব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ওই সব নৌযান খুব বেশি দিন নির্বিঘ্নে চলেনি। ফলে ২০১১ সালের মাধ্যভাগ থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ২০০২ সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলীয়া’ নৌযানটির কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটি শুরু হয়।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপকূলীয় নৌ যোগাযোগ নির্বিঘ্নে করার লক্ষে উপকূলীয় নৌপথের জন্য ৭’শ ও ৫’শ যাত্রী ধারণ ক্ষমতায় দুটি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ দুটি নৌযান নির্মাণ প্রকল্প একনেক এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এর প্রায় এক বছর পরে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৭’শ যাত্রী বহনক্ষম উপকূলীয় নৌযানটি নির্মার্ণের লক্ষে বিআইডব্লিউটসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড এন্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র সাথে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ ও প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থ নৌযানটির নির্মাণকাজ ২০ মাসে শেষ হবার কথা থাকলেরও তিন দফায় ৪ বছর সময় বাড়িয়ে অতিসম্প্রতি তা হস্তান্তর করা হয়েছে। মূলত ২০ মসের নির্মাণকাজ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি শেষ করেছে মাত্র ৬৮ মাসে। গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এমভি তাজ উদ্দিন আহমদ’ নামের এ নৌযানটি আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করেছেন।

১১.৪৮ ফুট মোলডেড ও ৭.৩৮ সর্বোচ্চ লোডেড ড্রাফটের এ নৌযনটিতে ইকনোমি ক্লাসে ৭১২ জন, স্টন্ডার্ড ক্লাসে ১৭২ জন ছাড়াও স্টান্ডার্ড ও বিজনেস ক্লাসে ৮ জন করে ১৬ জন যাত্রী বহন কর যাবে। নৌযানটিতে যাত্রী ও পণ্য মিলিয়ে ধারণক্ষমতা ১৭৫ টন। বেলজিয়ামের ‘ এবিসি’ ব্রান্ডের ৭৫০ অশ^শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ নৌযানটি ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮.৫২ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম।

অপরদিকে চট্টগ্রামের ‘এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড’র সাথে ৫’শ যাত্রী বহক্ষম একটি উপকূলীয় নৌযান নির্মার্ণের লক্ষে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে ২০ মাসে সরবারহের কথা থাকলেও ৪ দফায় আরও ৪৮ মাস সময় বাড়িয়ে সম্প্রতি নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পরে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ৫মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা নৌযানটি উদ্বোধনের পরে অতিসম্প্রতি কুমিড়া-গুপ্তচড়া রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে।

১৬৪ ফুট দৈর্ঘ ও প্রায় ৩৫ ফুট প্রস্থ এ নৌযানটিতেও বেলজিয়ামের এবিসি ব্রান্ডের সাড়ে ৪শ অশ^ শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ৩টি জেনারেটর রয়েছে। ৫’শ যাত্রী বহনক্ষন এ নৌযানটিও পূর্ণ লোড নিয়ে ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮.৫২ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। যাত্রী ও পণ্য মিলিলেয় নৌযানটি ১২৫ টন বহন ক্ষমতা রয়েছে।

তবে চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে সরবারহের কথা থাকলেও কি কারণে ৪ দফায় ৪৮ মাস সময় বাড়িয়ে এসব নৌযান সরবারহ করা হল, সে প্রসঙ্গে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট মহলসহ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে।

তবে প্রকল্প মেয়াদ বাড়লেও ব্যায় বাড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

17 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন