২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শীতকালীন সবজি চাষে লাভবান কৃষকরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০৫ অপরাহ্ণ, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

শীতের শুরু থেকেই শীতকালীন সবজি চাষে মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কৃষকরা। শীত মৌসুমের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। কম খরচে ভালো ফলন পাওয়ায় ও বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় সবজি চাষে কৃষকরা বেশী আগ্রহী হয়েছেন। আবার ক্ষেতের পাশাপাশি অনেকেই বাড়ির আঙিনায়ও শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন।

উপজেলার সবজিখ্যাত গুঠিয়া, বামরাইল, জল্লা ও হারতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মাঠজুড়ে দেখা গেছে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, পালং ও লাল শাকসহ নানা জাতের সবজি।

এসব সবজি ক্ষেতে কোনো চাষীকে দেখা গেছে সবজি গাছের গোঁড়া ঠিক করছেন। মাটি আলগা করে নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ হেলে পড়া কোনো গাছ চোখে পড়লে ঠিক করে দিচ্ছেন। এভাবে শীতকালীন রকমারি সবজি নিয়ে কৃষকরা দিনের সিংহভাগ সময় ক্ষেতেই পার করছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসকল সবজি এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

তবে শীতকালীন এসব সবজিতে পোঁকা বা রোগের আক্রমণ হলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। যার কারনে সবজি চাষে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা সবজি চাষ করতে রয়েছেন ব্যস্ত।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ শত ৪০ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার ৮’শ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৮ শত ৯০ হেক্টর জমিতে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মৌসুম শেষের আগেই সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ডহরপাড়া গ্রামের সবজি চাষি মনির হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছর প্রায় ১ একর জমিতে সকল ধরনের সবজি চাষ করেন। এ বছর দেড় একর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, শালগম, পালং শাক চাষ করেছেন। কীটনাশক প্রয়োগ না করায় উৎপাদিত এসব সবজির চাহিদাও রয়েছে বেশ। তবে পোঁকা ও রোগের আক্রমনে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের কোনো ধরনের পরামর্শ বা সহযোগীতা না করায় আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। তারা নিয়মিত ফসলি জমিগুলো পরিদর্শন করে আমাদের সঠিক পরামর্শ দিলে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।

একই গ্রামের সবজি চাষি মোঃ ফিরোজ হাওলাদার জানান, শীতকালীন সবজি চাষে খরচ কম লাগে, এতে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। এবার তিনি ৫০ শতক জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছে। তবে চাষাবাদের সঠিক পরামর্শের অভাবে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়।

কৃষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য থাকায় প্রতিদিন মাঠে যেতে পারছেন না। তবে প্রায়ই মাঠে গিয়ে কৃষক ও ফসলের খোঁজ খবর নেন।

এদিকে বামরাইল ইউনিয়নের দক্ষিন মোড়াকাঠী গ্রামের শীতকালীন সবজি সীম চাষী নুরুল হক রাঢ়ী বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে তিনি সীম চাষ করছেন। এ বছরও তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে সীমের চাষ করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় মৌসুম শেষের আগেই তিনি সীম বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপাজর্ন করেছেন। আরও ৫০ হাজার টাকার সীম তিনি বিক্রি করতে পারবেন।

কালিহাতা গ্রামের টমেটো ও লাউ চাষী শেখ সালাম বলেন, এ বছর তিনি প্রায় দেড় একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। বাম্পার ফলন হওয়ায় মৌসুম শেষ না হতেই এরমধ্যে লাউ বিক্রি করে তিনি প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন। পাশাপাশি চাষী সালাম আরও ২৫ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। আশা করছেন তাতেও ভালো ফলন হবে।

বামরাইল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ তোফাজ্জেম হোসেন তুহিন জানান, উপজেলার বামরাইলে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করে অনেক চাষী লাভবান হয়েছে। তবে বাজারে সার, বীজ ও পরিবহন খরচ অনেক বেশি। যদি এসব জিনিসের দাম কম থাকতো, তাহলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।

শিকারপুর ইউনিয়নের মুন্ডপাশা গ্রামের নিরাঞ্জন মাঝি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে তিনি ৫০ শতক জমিতে লাউ চাষ করছেন। শুধু লাউ নয় এর শাক বিক্রি করেও অনেক টাকা তিনি উপাজর্ন করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় নয়টি ইউনিয়নে ব্যাপকহারে সবজি চাষ হয়েছে। সেই সাথে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরাও কৃষকদের সাবির্ক সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছি। যার কারনে সবজির ফলন খুব ভালো হয়েছে। পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়ছে। অনেক কৃষক সবজি চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন তালুকদার জানান, কম খরচে শীতকালীন সবজি চাষ কৃষকরা অনেক লাভবান হন। তাই এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়েও অধিক জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সরাসরি জমি থেকে কিনে নিয়ে যান। আবার অনেক কৃষক নিজের জমির উৎপাদিত সবজি নিজেই বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন।

তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে সবজি চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারনে একটু ব্যতিক্রম ঘটেছে। সেগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন