২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শেবাচিম হাসপাতালে ইনজেকশনে ১৯ রোগী অসুস্থ, তদন্ত কমিটি গঠন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ১৯ রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সেফিউরক্সিম নামক ৭৫০ মিলিগ্রাম আইভি ইনজেকশন দেয়ার পর পরই রোগীদের শরীরে ঝাঁকুনি ও জ্বর আসে। পরে তাদের অন্য চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। এই ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ২ নম্বর পুরুষ অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে এই ঘটনায় রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ইউনুস মিয়াকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে অর্থপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহিদ ও মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুন্নবী তুহিনকে সদস্য করা হয়েছে। এদেরকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ঘটনার পর পরই অর্থপেডিক্সসহ হাসপাতালের সকল ওয়ার্ডে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির লিমিটেড এর প্রস্তুতকৃত ২০৩২/১৮ নম্বর ব্যাচের সেফিউরক্সিম ইনজেকশনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী ইমতিয়াজ আহমেদ, মো. আব্দুল কুদ্দুস, বিকাশ চন্দ্র হালদার, অলিয়ার, এনামুলহকসহ অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে দায়িত্বরত সেবিকা (নার্স) রোগীদের শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন।

এর ৫ থেকে ১০ মিনিট পরেই প্রত্যেক রোগীর শরীরের তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সাথে রোগীদের শরীরে প্রচ- ঝাঁকুনি শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তারা দায়িত্বরত নার্সদের ডাকেন। তাছাড়া এ নিয়ে ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদেরমধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফনার্স (ব্রাদার) শাহ আলম বরিশালটাইমসকে জানান, রাতে ২১ জন রোগীকে এন্টিবায়টিক সেফিউরক্সিম, অমিপ্রাজল ও কিটোরোলাক ইনজেকশন পুশ করেন তিনি। যে তিনটি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির মেয়াদ রয়েছে। বিশেষ করে সেফিউরক্সিমনামের যে ইনজেকশনের কথা বলা হচ্ছে ২০৩২/১৮ ব্যাচের ওই ইনজেকশনের মেয়াদ রয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। যে কারণে এই ইনজেকশনের কারণেই তাদের এমনটি হয়েছে নাকি অপর দুটি ইনজেকশনের কারণে হয়েছে সেটি নিশ্চিত নন তিনি।

অর্থপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. সুদীপ কুমার হালদার বরিশালটাইমসকে বলেন, হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত সেফিউরক্সিম ওষুধের মান ভালো না হওয়াতেই ১৮/১৯ জন রোগীর পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই রোগী গুলোকে কটসননামক ইনজেকশন পুশ করি। পরে তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। বর্তমানে তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত।

তিনি বলেন- ১০/১৫ দিন আগেও সেফিউরক্সিম ইনকেশন পুশ করার পর পরই একই ধরনের ঘটনা ঘটে। তখন অবশ্য ২/৩ জন রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিলো। তখনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ক’দিন না যেতেই আবার একই ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে এই ওষুধটির প্রতি এখন আর আমাদের আস্থা নেই। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো হাসপাতালের সকল ওয়ার্ডে এই ইনজেকশনটির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার জন্য।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বরিশালটাইমসকে বলেন, শুধুমাত্র অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডেই এই ঘটনা ঘটেছে। এর পর পরই আমরা ওয়ার্ডটি থেকে ২০৩২ নংব্যাচের সেফিউরক্সিম সকল ইনজেকশন সরিয়ে নিয়েছি। পাশাপাশি একই ব্যাচের ইনজেকশন অন্য ওয়ার্ডের রোগীদের যাতে না দেয়া হয় সে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ইউনুস মিয়াকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে অর্থপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রা ডা. মো. জাহিদ ও মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুন্নবী চৌধুরী তুহিনকে সদস্য করা হয়েছে। এদেরকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তাছাড়া ইনজেকশনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাব্রেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তাছাড়া হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল থেকে অন্য ব্যাচ নম্বরের সেফিউরক্সিম ইনজেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।’’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন