২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শ্বাসকষ্টে ধুঁকছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৮ অপরাহ্ণ, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ফারহানা ইয়াসমিন:: উন্নয়ন ও দূষণ এই শব্দ দুটি আমাদের দেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে শব্দ দুটি একই গতিতে বিপরীতভাবে ধাবিত হচ্ছে। একটি দেশ যত উন্নত হবে, তত দূষণের মাত্রাও বেড়ে যাবে।

এই দূষণ বলতে আমরা পরিবেশ দূষণ বুঝি। আর পরিবেশের মধ্যে বায়ু হলো অন্যতম একটি উপাদান। জীবন ধারণের জন্য এই বায়ু অত্যাবশ্যক। কেননা, মানুষ প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ বার শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে।

হিসাব করে দেখা গেছে, মানুষ প্রতি ৪ মিনিটে ১৬ বার, প্রতি ঘণ্টায় ৯৬০ বার, দিনে ২৩ হাজার ৪০ বার এবং বছরে ৮৪ লাখ ৯ হাজার ৬০০ বার শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। অথচ সেই আমরা যদি প্রতিদিন বা প্রতিক্ষণ দূষিত বায়ু গ্রহণ করি তাহলে আমাদের কী অবস্থা হতে পারে?

দূষিত বায়ুর তালিকায় বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান সবার উপরে। কোনো এক সময় বিশুদ্ধ বাতাসের তালিকায় বাংলাদেশের বরিশালের অবস্থানও সবার উপরে ছিলো। কিন্তু ক্রমশ সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে দক্ষিণ বাংলার বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) অবস্থিত। তার বিপরীত পাশে অর্থাৎ নদীর বিপরীত পাড়ে এম.খান নামক একটা খোলা কারখানা আছে। যেখানে রাস্তা মেরামত করার জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর মিশিয়ে পিচ পোড়ানো হয়ে থাকে।

এটাকে আসলে কারখানা বলা যায় না। এটা একটা এলাকা যেখানে সাধারণত রাস্তা মেরামতের উপাদান উৎপাদিত হয়ে থাকে। যার জন্য প্রয়োজন হয় আগুন। আগুনের জন্য এখানে কর্মরত শ্রমিকেরা অসংখ্য গাছপালা নিধন করে যাচ্ছে এবং এই আগুন নিয়মিত কালো ধোঁয়া উৎপন্ন করে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ ঐ এলাকার অধিকাংশ গাছের পাতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষ ঘুম থেকে উঠে সকালে মৃদু বাতাসের পরিবর্তে কালো ধোঁয়া দিয়ে দিন করছে।

একটি জাতির মেরুদণ্ড হলো তরুণ প্রজন্ম। আর সেই তরুণ প্রজন্মের আলোকিত জীবন যদি কালো ধোঁয়ার মধ্যে থাকে তাহলে কিভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবো?

এই এম.খাম বিষাক্ত পরিবেশের পাশে ১টি স্কুল, ১টি কলেজ, ১টি মসজিদ আছে। ঠিক তার বিপরীত পাশে একটি মেরিন একাডেমি হচ্ছে। যার কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করা যায় ১ বছরের মধ্যে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি নিবে। তার ঠিক পাশেই দক্ষিণ বাংলার বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ৮হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তারা প্রায় প্রতিদিনই এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে এবং ইতোমধ্যে সবাই এই বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার অংশীদার হচ্ছে।

শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, কয়েকশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সেতু অতিক্রম করেন। বিভিন্ন রুটের ৩০০-৩৫০ এর মতো বাস এই সেতু পাড়ি দেয়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি বাস দিনে ২বার শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই সেতু অতিক্রম করে। মোদ্দা কথা গন্তব্য স্থলে যাওয়া ও আশার পথে সবাই এই কালো ধোঁয়ার সাক্ষী হয়ে যায়।

কালো ধোঁয়ার মধ্যে থাকে কার্বন মনোক্সাইড (Co)। ১০০০পিএম কার্বন মনোক্সাইডের মধ্যে টানা ৪ ঘণ্টা অবস্থান করলে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। শ্বাস কষ্ট, মাথা ব্যথা, চোখমুখ জ্বালা পোড়া ছাড়াও অনেক রকমের শারীরিক সমস্যার উৎস হলো এই অভিশপ্ত কালো ধোঁয়া।

সুতরাং ববির প্রাণ বাঁচাতে হলে এখন আমাদের করণীয় কী হতে পারে? এ ব্যাপারে বরিশালের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেয়র, প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি।’ লেখক : শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন