২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে এমপিদের ঢিসুম–ঢুসুম

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে এবার এমপিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকটে থাকা দেশটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এমন ঘটনা ঘটল। সংঘর্ষে আহত এক এমপিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেক এমপি ছুরি হাতে প্রতিপক্ষকে শাসাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এমপিদের হাতাহাতির এই ভিডিও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে দেশটিতে ‘স্বীকৃত’ কোনো প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদ নেই।

গার্ডিয়ান অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গতকাল সকালে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। বিকেলে বির্তর্কিত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা স্পিকার কারু জয়সুরিয়ার দিকে তেড়ে গেলে অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়।

ওই সময় স্পিকারের পক্ষ নেন বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দলের এমপিরা। এমপিদের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) এমপি পালিথা থিওয়ারাপ্পেরুমা ছুরি হাতে সেখানে প্রতিপক্ষ এমপিদের শাসাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিকেলের ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন আরেক এমপি ইন্দিকা অনুরুদ্ধ।

ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০-৩৫ জনের মতো এমপি—যাঁদের বেশির ভাগই সাদা রঙের পোশাক ও গায়ে উত্তরীয় পরা, তাঁরা পরস্পরকে ধাক্কা মারছেন, হাতাহাতি করছেন। অধিবেশন কক্ষে কয়েক মিনিট ধরে এই হাতাহাতি চলে। কয়েকজন ঘুসি পাকাচ্ছিলেন। একজন এমপিকে স্পিকারের দিকে কাগজ ফেলার ঝুড়ি ছুড়ে মারতে দেখা যায়।
রাজাপক্ষের দলের এমপি ডিলুম আমুনুগামা স্পিকারের মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার সময় আহত হন। তাঁর শার্ট রক্তে ভিজে যায়। তাঁকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারামারি চলার মধ্যেই স্পিকার, রাজাপক্ষে ও বিক্রমাসিংহেকে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

ইউএনপির এমপি হর্ষ ডি সিলভা এই সহিংসতাকে ‘পার্লামেন্টের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক দিন’ বলে মন্তব্য করেন।

গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলে শ্রীলঙ্কাজুড়ে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। আগামী ৫ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন হবে জানিয়ে ৯ নভেম্বর পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। পার্লামেন্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়। আদালত মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে অবৈধ জানিয়ে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আদেশ দেন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কাকে নির্বাচন করা হবে, এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটের ব্যবস্থা করতে বলেন আদালত। পরদিন বুধবার (১৪ নভেম্বর) কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট বসে। পার্লামেন্টে মাহিন্দা রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়।

তবে বরখাস্ত করা হলেও বিক্রমাসিংহে এখনো নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করে আসছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বুধবার রাতে বলেছেন, তিনি পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন।

স্পিকার জয়সুরিয়া পার্লামেন্টে বলেছেন, অনাস্থা ভোট হওয়ায় এখন সেখানে কোনো প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদের কার্যকারিতা নেই।

সংঘর্ষের আগে পার্লামেন্টে সকালে দলের এমপিদের চিৎকার করে জোরালো সমর্থনের মধ্যে দিয়ে রাজাপক্ষে তাঁর বক্তব্যে বলেন, ক্ষমতার লোভে নয়, বিক্রমাসিংহের দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের কারণে দেশকে রক্ষা করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব ও প্রেসিডেন্টের পদ বিরাট কিছু হলেও, আমার কাছে তা নয়।’

তাঁর এই বক্তব্যের পর স্পিকার এই বক্তব্যের সমর্থনে বা প্রত্যাখ্যানে ভোটাভুটির উদ্যোগ নিলে রাজাপক্ষের দলের এমপিরা তাঁর দিকে তেড়ে যান। ওই সময় তাঁদের বাধা দেন বিক্রমাসিংহের দলের এমপিরা। এরপরই মারামারি শুরু হয়।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন