২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সংঘাত-সহিংসতায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাপ-উত্তেজনা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৩৮ অপরাহ্ণ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার বিকেলে এক পক্ষের চারজনকে কুপিয়ে জখমের পর থমথমে পরিস্থিতি মাঝে গভীর রাতে প্রতিপক্ষের একজনকে তুলে নিয়ে অন্ধকার কক্ষে নির্যাতনের ঘটনায় বাড়ছে উত্তেজনা। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। গোটা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক বিরাজ করায় ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ভীতিকর পরিস্থিতির অবসান এবং ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুধবার সকালে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের। কিন্তু এরপরেও উভয়গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে থাকায় সুমূহ সংঘাত-রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়- বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান নাভিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রুম্মান হোসেন নিজেদেরকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে অধিপত্য বিস্তারের লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। দুটি গ্রুপ এর আগে একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ড জড়ালে তা ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকলেও মঙ্গলবার বিকেলে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করে। কিছুদিন পূর্বে শুরু হওয়া অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে টানতে উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিলে দেখা উত্তেজনা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলবার বিকেলে সংঘাতের মধ্যদিয়ে রক্তপাতে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়- মঙ্গলবার বিকেলে তাহমিদ জামান নাভিদের বেশ কয়েকজন অনুগত শিক্ষার্থীকে রুম্মান হোসেন ক্যাম্পাসে আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে নাভিদ ১০/১২ জনকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে উভয়গ্রুপের মধ্যে তীব্র উত্তেনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয়গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় গ্রুপপ্রধান রুম্মান হোসেন এবং তার একই বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাফি, ভ‚তত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের জিহান হোসেন ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের হাফিজুর রহমানকে কুপিয়ে জখম করে। পরে তাদের উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ভুমিকা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও রাতে আবার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় রুপ নেয়।

অপর একটি সূত্র জানায়- নাভিদের অনুসারী মোহাম্মদ শাহাজালাল নামের এক শিক্ষার্থীকে ওই রাতে শেরে বাংলা হলের ৪০১৬ নম্বর কক্ষ থেকে তুলে নিয়ে যায় রুম্মান হোসেনের বাহিনী। পরে তাকে একই হলের ১০০১ নম্বর অন্ধকার কক্ষে আটকে নির্যাতন করে জিয়োলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগের শিক্ষার্থী শান্তসহ অন্তত ১০জন। এসময় তার মুখও হাত-পা বেঁধে রড ও দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে মারধর করে। কিন্তু মারধরের একপর্যায়ে শাহাজালাল কৌশলে দৌড়ে পালিয়ে ৪০১৪ নম্বর রুমে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও ধরে নেওয়ার চেষ্টা চালালে অপর শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে ব্যর্থ হয় এবং একপর্যায়ে স্থান ত্যাগ করে রুম্মান অনুসারীরা। এনিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী বুধবার মাঠে নেমেছে। প্রতিবাদস্বরুপ তারা দুটি ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি এবং ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতির অবসান চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার জানান, উত্তপ্ত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে বুধবার সকালে প্রক্টোরিয়াল বডি জরুরি সভা করেছে। সেখানে ঘটনার সাথের জড়িতদের শনাক্তকরণে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ঢাকায় অবস্থানরত ভিসিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়- এর আগেও একাধিকবার এ দুটি গ্রুপ সংঘাতে জড়িয়ে রক্তপাত সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন কোন শাস্তিমুলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং হুঁশিয়ারিতে ইতি টানায় উভয়গ্রুপ দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং সংঘাত-সহিংসতার পথ বেঁচে নেয়। ফলশ্রুতিতে ঘটে যাওয়া এবারের রক্তাপাতের ঘটনাটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত করে তুলেছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এবারও তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াতেই সিদ্ধান্ততেই আবদ্ধ থাকছে, যে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’

সূত্রের বরাত দিয়ে জানতে প্রক্টর সুব্রত কুমারের সাথে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে সেটি প্রক্টোরিয়াল বডির। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা উপাচার্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা থেকে ফিরে পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেবেন।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী জানান, নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আসা তাহমিদ জামান নাভিদের বাবা বরিশাল মহানগর বিএনপির একজন পদধারী নেতা। অথচ তিনি নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড জন্ম দিয়ে আসছেন। মহানগর আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে নাভিদ ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অবশ্য নাভিদ তার বাবার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইছেন। বরং উল্টো তিনি প্রশ্ন রাখলেন- বাবা বিএনপি করলে কী ছেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে কোন বিধি নিষেধ রয়েছে কী না ? তাছাড়া নাভিদ প্রতিপক্ষ রুম্মানসহ তার অনুগত শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে জখম করার বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন। বলছেন- হাফিজুর রহমান নামে তার অনুসারীরে রুম্মান আটকে রাখার খবর পেয়ে উদ্ধার করতে গেলে হাতাহাতি হয়েছে মাত্র। এতে সেখানে কোন রক্তপাতের ঘটনা না ঘটলেও তারা জখম হওয়ায় একটি নাকট সাজিয়েছেন।

তবে এই বিষয়ে জানতে রুম্মানের সাথে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন