১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলেন স্বামী!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:২৬ অপরাহ্ণ, ২৩ নভেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এক গৃহবধুকে তালাক দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ডাকযোগে তালাকের নোটিশ হাতে পান পাবনার চাটমোহরের দুলালী খাতুন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউপির কাটাখালি গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে দুলালী। ছোটবেলায় বাবা হারানো দুলালীর মা খইচন বেওয়া মানুষের বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়েকে বড় করেন। বছর পাঁচেক আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে একই এলাকার কান্দিপাড়া গ্রামের রব্বানী হোসেনের ছেলে দিনমজুর আল-আমিন হোসেনের সঙ্গে দুলালীর বিয়ে দেন। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি বাইসাইকেলসহ নানা উপহার সামগ্রী দেয়া হয়।

দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই ৫ জুলাই চাটমোহর পৌর শহরের ম্যারেজ রেজিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কাজী অফিসে গিয়ে আল-আমিন হোসেন তালাক নামায় স্বাক্ষর করে কাগজ নিজের কাছে গোপন করে রাখেন। সম্প্রতি আল-আমিন সেই তালাক নোটিশ ডাকযোগে দুলালীর কাছে পাঠান। শনিবার তা হাতে পান দুলালী। সোমবার কাটাখালি গ্রামে দুলালীর মায়ের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় দুলালী খাতুনের সাথে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

দুলালী বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়া কী আমার অপরাধ? প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দিয়েছি বলে স্বামী-শ্বশুর, শাশুড়ি মারধর করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এখন স্বামী তালাক দিল! আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।

দুলালীর মা খইচন বেওয়া জানান, বিয়ের দুই বছর পর দুলালীর ঘরে ছেলে সন্তান ‘দুর্জয়’ জন্ম নেয়। কিন্তু দুর্জয় শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুলালীর জীবনে অভিশাপ নেমে আসে। এর জন্য দুলালীকে দায়ী করেন আলামিন, তার বাবা রব্বানী হোসেন এবং শাশুড়ি ফরিদা খাতুন দুলালীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মায়ের বাড়ি ফিরে ন্যায়বিচার চেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ গ্রাম প্রধানদের কাছে দুলালী বারবার ধর্ণা দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

তবে আলআমিন হোসেন জানান, প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য তালাক দেইনি। কার্যকলাপের কারণে তালাক দিয়েছি। ছেলে আমার যেহেতু, সেহেতু দায়িত্বও আমার। তালাক নোটিশ গোপন করলেন কেন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

চাটমোহরের ইউএনও সৈকত ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ তালাক দিতে পারে। তবে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে বিষয়টি অমানবিক। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন