২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

“সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার ঠিক হবে না”-সাবেক সিইসি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০০ পূর্বাহ্ণ, ১১ নভেম্বর ২০১৮

“সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার ঠিক হবে না”–সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদা

✪ আরিফ আহমেদ মুন্না ➤ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, এককভাবে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। সবার অংশ গ্রহণেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচন ও সংসদ বর্জন করা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয় বলে আমি মনে করি। গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, এবার সেটা করবে বলে মনে করি না। আশা করি তারা নির্বাচনে আসবে। এই নির্বাচনে না এলে তারা সমস্যায় পড়বে। জনগণ এখন আর আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ, জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না। কিছুদিন আগে শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে যা করেছিল, তা ছিল অমানবিক আচরণ । তাই সবাই সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে।

সিরড্যাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে শনিবার ‘জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নতুন ভোটার শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সহযোগিতায় সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এই ব্যতিক্রমী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান। বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ। অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

ওই জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি শাহিন হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ‘সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার ঠিক হবে না। ইভিএম নিয়ে মানুষের ধারনা এখনো স্পষ্ট নয়। তাছাড়া এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দল চাইছে না সেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার না করাই শ্রেয়’। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন এবং সংসদ বর্জন করা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয়। কারণ জনগণ ভোট দিয়ে যাদেরকে সংসদে পাঠায়, তারা যদি কথায় কথায় সংসদ বর্জন করেন, তাহলে জনগণকেই পক্ষান্তরে ক্ষমতাহীন করা হয়, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমি মনে করি, কোনো বিষয়ে মত-দ্বিমত থাকতেই পারে, কিন্তু নির্বাচনী মাঠ বর্জন করা ঠিক নয়। তাছাড়া কোনো একটি দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখন প্রথাগত রাস্তার আন্দোলন মানুষ মেনে নেয় না’।

বরিশাল-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আরেক প্রতিনিধি অর্পিতা বিনতে ইউসুফের এক প্রশ্নের উত্তরে সুজন সভাপতি এম. হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে বাধ্য। কিন্তু সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কমিশন চাইলে তফসিল ঘোষণা আরও পিছিয়ে দিতে পারতো। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষা চলছে। আরেকটি বিষয় হলো- যদি ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২৮ জানুয়ারির আগে এক মাসের বেশি সময় মাস ধরে একসাথে দুটি সংসদ বহাল থাকবে। তড়িঘড়ি কেন এই নির্বাচন? এটা কার স্বার্থে এবং কেন করা হচ্ছে- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়’।

এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শামসুল হুদা কমিশন দুই বার তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে যতগুলো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও সুষ্ঠু হয়নি। এর মূল কারণ হলো প্রশাসনের ব্যাপক দলীয়করণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা প্রসঙ্গে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। আদালতের কাজ হলো দিক-নির্দেশনা দেয়া। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থায় যাতে ক্ষমতায় ভারসাম্য তৈরি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার। গণভোট ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে যাতে কেউ সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় পরিবর্তন করতে না পারে সেজন্যও উদ্যোগ নেয়া দরকার।

গবেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আগে স্লোগান দিতাম, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’। বর্তমানের স্লোগান হলো-‘আমার ভোট আমি দেবো, দেখে-শুনে-বুঝে দেবো’। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তিনি।

সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার জানান, জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আগে সারাদেশের ৩০টি নির্বাচনী আসনে ২৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। সেখান থেকে বিজয়ী প্রথম তিনজনকে নিয়ে সারাদেশের মোট ৯০ জন শিক্ষার্থী নতুন ভোটার নিয়ে এই জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষা শেষে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী ১০ জনকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। #

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন