চকবাজার আগুনে ব্যাপক প্রাণহানির দায় সরকার এড়াতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় না।’

শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চকবাজার দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। সেখানে তিনি পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরাতে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন।

২০১০ সালে নিতমলী আগুনের পর আবাসিক ভবন থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কেরানিগঞ্জে একটি রাসায়নিক পল্লী তৈরিরও পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

চকবাজার দুর্ঘটনা যদিও গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে শুরু হয়েছিল, তারপরও আগুন ছড়িয়ে পুড়ে যাওয়া ওয়াহেদ ম্যানসনে দাহ্য পদার্থ ও নানা ধরনের রাসায়নিক ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু গোডাউন সরিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে গোপনে এসে অনেকে জেঁকে বসেছে। এটার ক্লোজ মনিটরিংটা হলে হয়তবা এমনটা হতো না, সেটা ঠিক আছে।’

এই ঘটনার দায় এখন সরকারকে নিতে হবে, এটাও স্বীকার করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘এখন দায় দায়িত্ব; কোনো কিছু দেশে ঘটলেই যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে, দায় তো সরকার এড়াতে পারবে না। এটা তো সত্য কথা। কিন্তু জনসাধারণ যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও সচেতনতার দরকার। কারণ তাদের এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। সেখানে সচেতনতাও একটা ব্যপার ছিল, সতর্কতার ব্যপার ছিল।’

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা পাওয়ার কথা আগের দিনই বলেছিলেন কাদের। আজ তিনি আবার বলেন, ‘যেটা হয়ে গেছে এবং যারা চলে গেছে, ক্ষয়ক্ষতি যা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফেরত দেওয়া যাবে না। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’

‘সেটা আরও আগে করা উচিত ছিল। করা হয়নি, চেষ্ট ছিল। কিন্তু এটা এমন একটা ঘনবসতি পূর্ণ  ঘিঞ্জি এলাকা, এখানের কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আবার ভেতরে ভেতরে এসে জায়গা নিয়ে ফেলেছে। এটা একটু মনিটরিং করলে হয় তো এড়ানো যেত।’

‘যেটা ভুল এটা সংশোধন করে নতুন করে পথ চালার বিকল্প কিন্তু নেই। এখন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব কেমিক্যাল গোডাউন গুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য। মেয়র (সাঈদ খোকন) এ ব্যপারে পদক্ষেপ নেবেন, শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে বলেছেন। আশা করি মেয়র সাহেব কাল বিলম্ব না করে পদক্ষেপ নেবেন।’

কবে নাগাদ রাসায়নিকের গুদাম বন্ধ হতে পারে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অনতি বিলম্বে কেমিক্যলের গোডাউন গুলো সরিয়ে নিতে হবে। এখানে রাখা যাবে না। এ ব্যপারে কোন প্রকার গাফিলতি আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। দিনক্ষণ এভাবে বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে দিনক্ষণের কী আছে?’

‘কোন কেমিক্যাল ক্ষতিকর কোনটা না সেটা মেয়র দেখবেন, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিকর কেমিক্যাল আছে বা অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল সেটা বিশেষজ্ঞরা জানেন। সে ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে কোন প্রকার কাল বিলম্ব করা যাবে না।’

হাসপাতালে দর্শনার্থীদের ভিড় না করারও পরামর্শ দেন সড়ক মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি একটা অনুরোধ করব, যারা বার্ন ইউনিটে ভর্তি অছেন, এখানে যদি দর্শনার্থী বাড়তে থাকে, তাহলে রোগীর জন্য খারাপ হবে। ডাক্তাররা বার বার বলছে আপনজনকে বাঁচাতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। দর্শনার্থী বাড়ানো যাবে না।’

শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গ

কেমিক্যাল থেকে আগুন ছড়ায়নি- শিল্প মন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে কীভাবে নিচ্ছেন জানতে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি পত্রপত্রিকার যা দেখেছি তিনি সেখানে বলেছেন, এখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সিলিন্ডার থেকে। তিনি বলেননি যে,  কেমিক্যালের কারণে আগুন ছড়ায়নি। একথা তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন সিলিন্ডার সূত্রপাত।’

ফখরুলকে জবাব

সরকারের দায়িত্বহীনতায় চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান কাদের। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব কী বলছেন সেটা না বলে আমি একটা কথা বলতে চাই, যে বিষয়টা হয়ে গেছে এই বিষযটা নিয়ে এই দুর্ঘটনা নিয়ে প্রত্যেকেরই দায় দায়িত্ব আছে, নাগরিক হিসেবে সবাইকে পজেটিভ কিছু করতে বলব।’

‘রাজনৈতিক দল হিসেবে, এগুলো লোকের প্রাণহানী মানুষের দুঃখ দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে আমাদের কারও রাজনীতি করা উচিত না। এ বিষয়টি আর যাই করুন রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন না।’