১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সাংবাদিক ম্যানেজে বরিশালের সেই বিতর্কিত ওসির দৌড়ঝাঁপ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪১ অপরাহ্ণ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের উজিরপুর মডেল থানায় আটকে বিধবা বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগে দেশব্যাপী সমালোচিত থানা পুলিশের সেই বিতর্কিত ওসি শিশির নিজেকে বাঁচাতে এবার মিডিয়াপাড়ায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। পাশাপাশি নির্যাতিতা বৃদ্ধাকে ম্যানেজ করতে তিনি উজিরপুরের স্থানীয় কতিপয় লোকজন নিয়ে বিভিন্ন মহলে ছুটছেন। নিজের অপরাধ-অপকর্মকে আড়াল করতে ওসি শিশির শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কতিপয় কথিত সংবাদকর্মীদের সাথে গোপন বৈঠকও করেন। পরে ওই রাতেই তাদের ম্যানেজ করে ওসি শিশির নিজেকে রক্ষায় মারধর করা ওই বৃদ্ধা রাশিদা বেগমের বিরুদ্ধে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যাচার করায়।

এদিকে নির্যাতিতা বৃদ্ধা রাশিদা বেগম রোববার দুপুর ২টার দিকে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমানে সে বরিশাল শহরের গড়িয়ারপাড় এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ওই বাড়ির মালিককে ম্যানেজ করে তার মাধ্যমে ওসি শিশির ও কনস্টেবল জাহিদসহ কতিপয় লোক নিয়ে তাকে (বৃদ্ধা) গড়িয়ারপাড় বাসস্ট্যান্ডের একটি ক্লাবে ডেকে নেয়। সেখানে ওসি শিশির তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অস্বীকার করার জন্য তাকে (বৃদ্ধা) অনুনয়-বিনয় করেন। একপর্যায়ে ওসি শিশির তাকে অনেক টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে “পুলিশ নয় জনগন মারধর করেছে” বলে স্বীকার করার জন্য প্রস্তাব দেন। তিনি আরও জানান, গত শনিবার জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার নিকট থেকে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেছেন এবং কাগজে লিপিবদ্ধ করেছেন।

আরও পড়ুন…

## বরিশাল ডিআইজির কাছে অভিযোগ করায় বিধবা বৃদ্ধাকে পেটালেন ওসি

এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে (বৃদ্ধা) ঘটনার সময় উপস্থিত সাক্ষী নিয়ে রোববার পুনরায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হতে বলেন। রাশিদা অভিযোগ করে বলেন, আমি উজিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা না, তার ওপরে অভিযুক্ত ওসি এখনও ওই থানার দায়িত্বে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষদর্শী কেউ ভয়েও ওসি ও পুলিশ কনস্টেবল জাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে রাজি হবে কীনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

তবে উজিরপুর থানা থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়া হলে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী থানার পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয়রা সাক্ষী দিবেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

সূত্রে জানা গেছে, ওসি শিশির উজিরপুর মডেল থানায় যোগদানের পর থেকেই উপজেলার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। যার কারণে আতংকে মধ্যে থাকা উপজেলাবাসী নিজেদের জানমালের নিরাপত্তায় রাত জেগে পাহারাও দিয়েছিলো একাধারে কয়েকমাস। কিন্তু তবুও থেমে নেই চুরি-ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। ২০১৮ সালের ১লা মার্চ উজিরপুর মডেল থানায় যোগদানের পরপরই ওসির নির্দেশে মাদক মামলার আসামী ছেড়ে দেওয়ার চুক্তিতে ঘুষ নিতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার হন। চলতি বছরের গত ২ সেপ্টেম্বর দিনে দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশকে খবর দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেনি।

গত ৮ আগস্ট দিবাগত রাতে ওসির নির্দেশে জামিনে থাকা মামলায় উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের পূর্ব মুন্ডপাশা গ্রামের দিনমজুর সোহরাব হোসেন বেপারীর ছেলে হাসান বেপারিকে থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা আটক করে এবং পরে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় রাতভর হাসানকে থানা হাজতে আটকে রেখে কোনো কারন ছাড়াই পরেরদিন ৯ আগস্ট সকালে আদালতে প্রেরণ করে। পরে কোর্ট জিআরও’র কাছে হাসানের জামিনের রি-কলের কাগজপত্র দেখালে হাসানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে উপজেলা সদরের শিকারপুর মেজর এম এ জলিল সেতু সংলগ্ন দক্ষিন শিকারপুর গ্রামের পুলিশ সদস্য সালাম খানের বাসায় পরিবারের সবার হাঁত-মুখ বেঁধে মারধর করে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতিকালে ওই পুলিশ সদস্যের বাসায় থাকা স্ত্রী, ছেলে, বৃদ্ধা শ্বাশুড়িসহ চারজনকে পিটিয়ে ডাকাতরা আহত করেছিলো।

গত ৩ জুলাই বিকেলে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার মেজর এমএ জলিল সেতু সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক সুপার এজেন্টকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ১২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করে আটক করতে পারেনি। সর্বশেষ বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কাছে উজিরপুর ওসির বিরুদ্ধে নালিশের অপরাধে গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে থানার ভিতরে ও বাইরে রাশেদা বেগম নামে এক বিধবা বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগে দেশব্যাপী সমালোচিত হয়েছেন ওসি শিশিরসহ এক পুলিশ সদস্য। সমালোচিত এসব কর্মকান্ডে জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বহু বিতর্কিত ওসি শিশির বহাল তবিয়াতে থাকায় উজিরপুরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ভুক্তভোগীরা অনেকেই হয়রানির ভয়ে এই ওসির অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী, বিতর্কিত ওই ওসিকে থানায় বহাল রেখে তদন্ত কতোটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এছাড়া ওসি শিশির যোগদানের পর থেকে বিগত দেড় বছর ধরে উজিরপুর থানায় বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধর্ষন ও প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা। অহরহ হয়রানি হচ্ছে সাধারন মানুষ। থানায় বেড়েছে চিহ্নিত দালালদের দৌরাত্ম্য।

তাছাড়া সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায়ও বেশ সমালোচিত ওসি শিশির। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার আলোচিত জল্লা ইউপির জননন্দিত চেয়ারম্যান নান্টু হত্যাকান্ডের পর জল্লায় অনেক বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ও নারকীয় তান্ডবের ঘটনায় ওসির ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছিলো।

চেয়ারম্যান নান্টু হত্যাকান্ডের পরেরদিন ওসি শিশিরের উপস্তিতিতে বাহেরঘাট এলাকায় দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে তান্ডব চালায়। আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা হয়েছিলো প্রবাসীর খোকন সরদারের বহুতলা ভবন ও একই গ্রামের হালিম সিকদারের পুত্র সাইদুল সিকাদার দোকান ঘরটি। দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে যায় মালামাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে, নান্টু হত্যাকান্ডের পরপরই ওসির উপস্তিতিতে বেশ কয়েকটি পরিবারের উপর অমানবিক তান্ডব চালিয়েছিলো কতিপয় সন্ত্রাসীরা। তখন ওসি শিশিরের ভ‚মিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ।

এমনকি আগুন দেয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দমকল বাহিনীকে ঢুকতে পর্যন্ত বাধা প্রদান করা হয়।’

আরও পড়ুন…

## বিধবা বৃদ্ধাকে পেটানো উজিরপুরের ওসি-কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

 

 

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন