২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিলো পুলিশ, মামলা ও কমিটি গঠন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০৪ অপরাহ্ণ, ২২ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: পাবনায় ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীরা পুলিশের সম্মুখে দেশীয় অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে আব্দুল আলীম নামের ওই যুবককে।

এই ঘটনায় সোমবার রাতে পাবনা সদর থানাতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম আরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার রাতে আহত আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে দশ জনের নাম উল্লেখ করে পাবনা সদর থানাতে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার পরে অভিযান চালিয়ে মালিগাছা উইনিয়ন থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আহত যুবক আব্দুল আলীম পাবনা সদর উপজেলার নুরপুর এলাকার মৃত আয়নুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাছের ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারী কাজ করে থাকেন বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের গাছপাড়া বাজার এলাকার।পাবনা সদর থানার ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা উইনিয়নের গত বছরের ২২ ডিসেম্বর করা একটি ধর্ষণ মামলার তদন্ত করতে যায়।

এ সময় তদন্তের কাজের জন্য তিনি ওই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীমের সাথে যোগাযোগ করেন ধর্ষণ মামলার সাক্ষীর জন্য। আলীম ও তার কয়েকজন সহযোগী গাছপাড়া বাজারে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে একটি ঘরে বসে কথা বলছিলেন। এই সময় ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামের ছোট ভাই মোঃ আরিফুল ইসলাম তার দলবল নিয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশের উপস্থিতে তার উপর আক্রমণ চালায়।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা খাইরুলে ও কনস্টেবল দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে স্থানীয়রা আহত আব্দুল আলীমকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসাপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয় অবস্থার অবনতি দেখে তাকে রাজশাহী স্থানান্তর করে। দুইদিন রাজশাহীতে চিকিৎসা নিয়ে আলীম বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়ে পালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনার বিষয়ে পরিস্থিতির শিকার আব্দুল আলিম বলেন, আমার সাথে ওসি স্যারের বেশ কয়েক দিন ধরে ওই ধর্ষণ মামলার বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো। শুকার আমাকে ফোন দিয়ে বাড়ি থেকে বাজারে উপর আসতে বলে। আমি এবং ওসি স্যারসহ সেখানে পাঁচ থেকে ৭ জন ছিলো। ঘরের মধ্যে আমরা বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করে চেয়ারম্যানের ভাইসহ ৫ থেকে ৭ জন পুলিশের সামনে আমাকে মারতে শুরু করে। ওসি স্যার দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

কী কারনে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন আমাকে উদ্ধার না করে। আমাকে বিপদে ফেলে তিনি পালিয়ে গেলেন। আমি এই ঘটনার সাথে যারা রয়েছে তাদের সকলের কঠিন শাস্তি দাবি করছি। পুলিশ স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে মার খাইয়েছে বলার কিছুই নাই।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মারপিটের সময় পুলিশের ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহী ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত বের হয়ে চলে আসেন। পরে স্থানীয়রা আলিমকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

পরে গতকাল সোমবার আলীমকে রাজশাহী থেকে পুনরায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে আলীম পাবনা হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের ২৯ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা এখন আশংকামুক্ত বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

ঘটনার বিষয়ে ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম জানান, একটি হত্যা মামলার সাক্ষীর বিষয়ে তদন্ত জন্য আলিমকে ডাকা হয়েছিলো সেখানে। আমরা তার সাথে কথা বলে চলে আসার সময় সেখানা হট্টগোল দেখতে পাই। তবে আমরা পরিস্থিতি খারাপ দেখে পুলিশ ফোর্স কল করি। সিপাহী এবং আমি দুই জনই নিরস্ত্র ছিলাম। কাকে কী জন্য পিটিয়ে আহত করেছে আমি সেটি জানি না। আমি থাকাকালীন মারপিট হয়নি।

এই ঘটনায় মামলার আসামির বড় ভাই মালিগা উইনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, তার ভাই ঘটনার সময় ছিলো না তিনি ব্যবসায়িক কাজে গত বুধবার ঢাকা গিয়েছেন। আমার ও আমার ভায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনা চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, মূল ঘটনার বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার রাতে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে পাবনা সদর থানাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পরে আমি নিজে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আশা করছি ঘটনার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের প্রত্যেককে আইনে আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এই ঘটনায় পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার এজহার নামীয় ৮নং আসামী মনহরপুর এলাকার তোজেম হোসেনের ছেলে আশরাফ হোসেন ও মামলার সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন একই এলাকার দারগ আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান তিনি।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন