২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সাধারণ ঘটনার অসাধারণ পদক্ষেপ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৯ পূর্বাহ্ণ, ২৯ মে ২০২০

সাধারণ ঘটনার অসাধারণ পদক্ষেপ!

আরিফ আহমেদ মুন্না প্রতিদিন আমাদের চারপাশে অসংখ্য ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে অনেক ঘটনাই আমাদের জন্য বেদনা ও বিষাদের কারণ হয়। আবার কিছু ঘটনা আমাদের লজ্জিত করে। তবে এর বিপরীতে কিছু মানবিক ঘটনাও ঘটে, যা আমাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ ও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সার্থকতা দেখিয়ে দেয়। অনেক সাধারণ ঘটনাও গুরুত্বের কারণে অনেকসময় অসাধারণ হয়ে যায়।

কয়েকদিন আগে তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে। ঘটনাটি ছিল খুবই সামান্য। তবে এর প্রেক্ষিতে যে মানবিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল নিঃসন্দেহে তা ছিল অসামান্য এবং বিরল। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে বাস-লঞ্চের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচলও। বিভিন্ন ট্রেনের ইঞ্জিনগুলো নিয়ে রাখা হয় বিভিন্ন জংশনের লোকশেডে। সেভাবেই দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনের লোকশেডে রাখা ছিল রেলের ৬৫ সিরিজের ৭ নম্বরের একটি ইঞ্জিন।

লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকায় দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ওই ইঞ্জিনটি অলস পড়ে থাকে জংশনে। এই সুযোগে ইঞ্জিনের মধ্যের ছোট্ট একটি ফোঁকরে বাসা বাঁধে একজোড়া শালিক। ওই শালিক দম্পতির প্রায় দুই মাসের সংসারে ডিম থেকে জন্ম নেয় দুটি ছানাও। বেশ স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদেই কাটছিল পাখি দম্পতির দিনকাল। বাচ্চা দুটিও ধীরেধীরে বড় হয়ে উঠছিল তাদের মা-বাবার আদর-যত্ন ও পরিচর্যায়। কিন্তু এরমধ্যেই ঘটে বিপত্তি।

লকডাউন শিথিল করে সরকারের সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে কয়েকদিন আগে ইঞ্জিনটি স্টার্ট করার মাধ্যমে এর ফিটনেস পরীক্ষা করতে যায় রেলকর্মীরা। ইঞ্জিন চালু করতে গিয়ে তাদের চোখে পড়ে একটি মা শালিক তার দুটো ছানাকে বুকে আগলে বসে আছে ইঞ্জিনের ভেতরে। ইঞ্জিন চালু করলে মা শালিকটা উড়ে বেঁচে গেলেও উড়তে না পারা বাচ্চাগুলো নিশ্চিত মারা যাবে। এমন আশঙ্কায় রেলকর্মীরা শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনটি চালু না করেই ফিরে যান এবং ঘটনাটি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।

এ ঘটনা শুনে সরজমিনে দেখতে আসনে জংশনের লোকশেডের ইনচার্জ কাফিউল ইসলাম। তাকে দেখে ভয় পেয়ে মা শালিকটা সরে গেলে চোখ না ফোটা ছানাগুলো কিচিরমিচির করে ওঠে। এ দৃশ্য ভাবিয়ে তোলে মানবিক রেল কর্মকর্তা কাফিউল ইসলামকে। এসময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন- শালিক দম্পতির ওই বাসাটি ভাঙা হবে না এবং তাদের ছানাগুলো উড়তে না শেখা পর্যন্ত ওই ৭ নম্বর ইঞ্জিনটি ব্যবহার করা হবে না। পাশাপাশি তিনি রেলকর্মীদের এই শালিক দম্পতির বাসার সার্বিক নিরাপত্তা এবং তাদের দেখভাল করারও নির্দেশ দেন। এমন সিদ্ধান্তে খুশি হন রেলকর্মীরাও।

ছোট্ট এই সামান্য ঘটনাটি পার্বতীপুর জংশনে অসামান্য চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন মানবিক উদ্যোগটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। পাখিপ্রেমের যে অনন্য দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছেন তা এককথায় নজিরবিহীন। দেশে আজ যেখানে মানুষে-মানুষে প্রতিহিংসা, সংঘাত, হানাহানি চলছে। মরণঘাতী করোনার বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও প্রতিবেশি চীন-ভারতে আজ যেখানে যুদ্ধের দামামা বাজছে। সেখানে একজোড়া শালিকছানার জন্য কোটি কোটি টাকা মূল্যের ইঞ্জিন বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে অর্থহীন হতে পারে বৈকি। তবে মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই উদ্যোগ অনন্য এবং অসামান্য। বাসযোগ্য অহিংস একটি মানবিক পৃথিবী গড়ার জন্য মানুষের মাঝে এখন এমন প্রেম অপরিহার্য। #

আরিফ আহমেদ মুন্না
মানবতাবাদী লেখক, কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বাবুগঞ্জঃ ২৯ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
ই-মেইলঃ ahamed.munna@gmail.com

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন