২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সাম্প্রদায়িক পোশাক নয় লুঙ্গি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:২৭ অপরাহ্ণ, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও লুঙ্গি একটি সার্বজনীন পোশাক। বাঙালি জীবনেরও সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এ পোশাকটি।

তবে এটি কোনো কালেই কোনো সম্প্রদায়ের পরিচয় বহনকারী পোশাক ছিল না। যেমন- গেরুয়া পরা মানেই কট্টর হিন্দুত্ববাদকে ধারণ করা বোঝায়।

কিন্তু লুঙ্গির কোনো সাম্প্রদায়িক পরিচিতি নেই। ভারতীয় উপহমাদেশের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছেই বহুকাল ধরেই এটি সমাদ্রিত। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

আসলেই আমরা লুঙ্গির গৌরব ভুলে যেতে বসেছি। লুঙ্গি একটি অপূর্ব জিনিস। বিদেশিদের কাছে এটি অষ্টম আশ্চর্য।

বোতাম নেই, দড়ি নেই, বেল্ট নেই, ফিতা নেই, সেফটিপিন নেই– এই আশ্চর্য জিনিস মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাভূত করে বাংলাদেশিদের কোমরে থাকে কী করে! এবং এটি খুলে যায় না কেন?

এবং এটি পরে শোয়ার পর তা সারারাত যথাস্থানে থাকে কী করে! অনভ্যস্ত মানুষরা ট্রাই করে দেখেছেন, সকালবেলা লুঙ্গি মাফলারের মতো গলায় এসে জড়ায়। তা হলে বাংলাদেশিরা এটি পরে দিনের পর দিন সতর ঢাকছে কী করে!

এই মহা রহস্যময় পোশাকটির প্রেমে পড়েছিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনাও। তিনি লুঙ্গি পরতেন, যাওয়ার সময় এই দেশ থেকে লুঙ্গি নিয়ে গিয়েছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী– ইদানীং রোজ তোপ দেগে বলছেন, ‘পোশাক’ দেখেই হাঙ্গামাকারীদের চিহ্নিত করা যায়।

গেরুয়া শিবির সেই শুনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লুঙ্গি’কে নিয়ে চলেছে লাগাতার বিদ্বেষমূলক প্রচার।

ছাপোষা বাঙালি লুঙ্গি পরে সকালের খবরের কাগজে চোখও রেখেছেন, থলি হাতে বাজারেও গেছেন। আম গৃহস্থ থেকে শিল্পী-সাহিত্যিক-রাজনীতিক, লুঙ্গিকে আপন করে নিয়েছেন সকলেই।

ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তার স্মৃতিলিখনে লিখেছেন- ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির আউটডোর শুটিং চলছে।

বৌদি (বিজয়া রায়) তাড়াহুড়োয় মানিক দার (সত্যজিৎ রায়) ব্যাগে পাজামা দিতে ভুলে গেছেন। …আমার একটা বিশাল বড় বার্মিজ লুঙ্গি ছিল।… বললাম– আপনি পরবেন?

মানিক দা সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাব খারিজ করে দিলেন। …মধ্যরাতে দেখি ছোটরা যেমন বড়দের ডাকে সেই রকম প্রায় ভয়ে ভয়ে ডাকছেন, সৌমিত্র, তোমার সেই লুঙ্গিটা আছে?

জনসভার মঞ্চ থেকে বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ চলছে! অথচ দক্ষিণ ভারতে লুঙ্গি বা মুন্ডু যেমন সার্বজনীন, বাঙালির জীবনেও লুঙ্গি কোনো সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ছিল না কোনো কালে।

সৌমিত্র নিজের বার্মিজ লুঙ্গির কথা লিখেছেন। প্রয়াত অভিনেতা, বাংলা ছবির অন্যতম ফ্যাশন আইকন বসন্ত চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জিত চৌধুরী জানালেন, বাবারও বার্মিজ লুঙ্গি ছিল। খাস আরাকান থেকে আনানো। বাড়িতে প্রায়ই পরতেন।

প্রখ্যাত প্রবীণ সাহিত্যিক মনে করতে পারলেন, সল্টলেকের বাড়িতে দেখা করতে গেলে লুঙ্গি পরেই স্বচ্ছন্দে কথাবার্তা বলতেন জ্যোতি বসু।

তার নিজের জীবনেও লুঙ্গি অপরিহার্য। বললেন, মাপের ঝামেলা নেই, টেকসই, বড় সুবিধেজনক পোশাক।

কলেজ স্ট্রিটের প্রবীণ প্রকাশক সবিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলি একবার তাকে বলেছিলেন- ব্রহ্মদেশের বৌদ্ধদের দেখেই কিন্তু আরবে লুঙ্গির প্রচলন।

বাঙালির জীবনে গরমের সময় আরামদায়ক পোশাক হিসেবে লুঙ্গির আদর খুব। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বাড়িতে চিরকাল লুঙ্গিই পরেছেন। এখনও তা-ই পরেন।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন