২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সাড়া ফেলেছে শ্যামলের কীটনাশকমুক্ত আম

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:০২ অপরাহ্ণ, ১৫ জুন ২০১৯

মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে ফল-মূল, শাক-সবজি নিয়ে মানুষ যখন আতঙ্কে; তখন কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন শ্যামল। এতে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের গুরুদাস ব্যানার্জি ওরফে শ্যামল ব্যানার্জি (৪৫) আশাব্যঞ্জক ফলনও পেয়েছেন। মিষ্টি ও সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির রসালো আম কিনতে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ভিড় করছেন তার বাগানে। বেশির ভাগ আমই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বাগান থেকে।

জানা যায়, শিকারপুর গ্রামের মৃত দিপক কুমার ব্যানার্জির ছেলে গুরুদাস ব্যানার্জি ওরফে শ্যামল ব্যানার্জি এসএসসি পাস করে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন ব্যবসায় নেমেছিলেন। লোকসানের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ছিলেন বারবার। চাকরিও নিয়েছিলেন। তবে উচ্চশিক্ষা না থাকায় সামান্য বেতন দিয়ে তার চলছিল না। শেষে ২০০৪ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে বাবার ১ একর জমিতে মাছের ঘের তৈরি করেন। ঘেরের চারপাশে ৫৫টি বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা রোপণ করেন। ঘেরে পানি শুকিয়ে গেলে ধান চাষ এবং গাছের ফাঁকে ফাঁকে শাক-সবজির চাষ করেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার এবং রোগ-বালাই দমনের জন্য ফেরমেন ফাঁদ ব্যবহার করেন। বর্তমানে উৎপাদিত ফসল তার পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিকটতম বাজারে বিক্রি করে ভালো মুনাফা অর্জন করছেন।

শ্যামল ব্যানার্জি জানান, কৃষি কাজ তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কৃষি কাজ করে এখন তিনি সাবলম্বী। জমিতে তিনি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। এরপরও অন্যদের চেয়ে বেশি ফলন হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে আমের ফলন শুরু হয়। তার বাগানের আম মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় এলাকায় কদর রয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে বারী আম-৫, বারী আম-৪, হারিভাঙা, গোপালভোগ, ফজলি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই ও বারমাস প্রজাতির আম রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে মাল্টা বাগান, ২০ শতাংশ জমিতে ভিয়েতনাম নারিকেল গাছ, ৩০ শতাংশ জমিতে আমড়া চাষ, কলা বাগান, গরুর খামার, মুরগির ফার্ম রয়েছে। এছাড়া কালোজিরা, সাদাজিরা, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মাদ্রাজি ওল, ঢেঁড়স, ফুলকপি, টমেটো, ডাটাশাক, লালশাক, পুইশাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন।

শ্যামল ব্যানার্জি বলেন, ‘এখন আর অভাব-অনটন নেই। তবে শ্রমিক সংকট প্রকট। কয়েকজন শ্রমিক এবং পরিবারের লোকজন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করছি। সরকারিভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হতো। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বানরের উৎপাত। ফসল নষ্ট করছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমিও তার বাগান থেকে কয়েকবার আম কিনেছি। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে তার আমে স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি নেই।’

শ্যামল ব্যানার্জি ২০০২ ও ২০০৮ সালে উপজেলা শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষি সনদ, রাসায়নিকমুক্ত মৎস্য চাষের সনদ, কৃষি সম্প্রসারণে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পনেটের প্রশিক্ষণ সনদ, হাঁস-মুরগি পালন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কৃষিমেলা প্রদর্শনী সনদ, শস্য বহুমুখী প্রকল্পসহ বিভিন্ন সনদ লাভ করেছেন।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন