১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সাড়ে তিন কোটি টাকায় নির্মিত সড়কের এ কী অবস্থা ?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩২ অপরাহ্ণ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও পটুয়াখালী >> পটুয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কার্পেটিং সড়কটি ছয় মাস যেতে না যেতেই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো সড়ক ভেঙে ওই এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে পুকুরজানা বাজার পর্যন্ত সোয়া পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির কাজ চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝিতে শেষ হয়। এরই মধ্যে সড়কটির প্রায় ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ভেঙে গেছে দুই পাশ। ভেঙে যাওয়া সড়ক মেরামত করেছেন স্থানীয় অটোচালকরা।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ওপর ‘বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ করা সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

নির্মাণের সময় কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, লকডাউনে সড়কের কাজ হয়েছে। এতে সড়ক পরিদর্শনে কেউ আসেনি। ঠিকাদার ইচ্ছেমতো কাজ করে গেছেন। যেখানে সড়কের পাশে নদী থাকায় পাইলিংয়ের দাবি করেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের কথার কোনও গুরুত্ব দেয়নি ঠিকাদার। কাজ তদারকির দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের কাছে পাইলিংয়ের দাবি জানালে বলেন, ‘কাগজে পাইলিংয়ের কথা নেই। আমারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করে যাবো’।

তবে এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করা হলে ঠিকাদার মাহফুজুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি।

ওই এলাকার বাসিন্দা সেকান্দার বয়াতী বলেন, ‘সড়কটি নির্মাণকালে আমরা নদীর তীরে পাইলিংয়ের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শোনেনি। প্রতি বছরের ন্যায় বর্ষাকালে নদী ভাঙন তীব্র হওয়ায় সড়কটি ভাঙছে। এতে আতঙ্কে আছি। এখনও পাইলিং করা হলে সড়কটি রক্ষা করা সম্ভব।’

পাঙ্গাশিয়া তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিয়ারা বেগম বলেন, ‘নদীতে ভেঙে পড়া রাস্তা দিয়ে স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত আসা যাওয়া করতে হয়। আমাদের এসব শিশুদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ রক্ষায় ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

স্থানীয় অটোচালক মো. সবুজ হাওলাদার বলেন, ‘সড়কটি হয়েছে যে বেশিদিন হয়নি। এর মধ্যে প্রায় ১০০ মিটার নদীতে ভেঙে পড়েছে। এছাড়াও দুই জায়গায় নদীর পানি ওঠা-নামার ফলে গর্ত হয়ে বিচ্ছন্ন হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। আমারা অটোরিকশা চালকরা গর্ত দুইটিতে মাটি দিয়ে ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করেছি। এতে সড়কটি রক্ষা হয়েছে। সরকারিভাবে যদি সড়কটি এখনও রক্ষার পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বিলীন হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘সড়কের ভাঙন মেরামতে প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টাকার (প্রাক্কলন) প্রকল্প হাতে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা রয়েছ। ইউপি চেয়ারম্যান কাজে গড়িমসি করলে আমরাই মেরামত করে দেবো।’

পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গাজী বলেন, ‘সড়কটি সংরক্ষণের জন্য এলজিইডিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যতদ্রুত সম্ভব মেরামত কাজ শুরু করা হবে।’

দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ শাদীদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত সড়কটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এলজিইডিকে অনুরোধ করা হয়েছে। রাস্তার প্রাক্কালনে পাইলিং না ধরায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন