১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডিতে নিহত ১৯ লাশের দাবিদার ৪২ জন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৯ অপরাহ্ণ, ১০ জুন ২০২২

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডিতে নিহত ১৯ লাশের দাবিদার ৪২ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: সীতাকুণ্ডের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এই অগ্নিদুর্ঘটনায় নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজছে ৪২ জন। যারা ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপ-পরিদর্শ ক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিদুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৭ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এসব লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯ মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে আছে।

তিনি বলেন, এসব মরদেহের শরীর আগুনে ঝলসে গিয়ে প্রায় বিকৃত হয়ে গেছে। কোন কোন মরদেহের শুধু অঙ্গ বিশেষ রয়েছে। যেগুলো দেখে কোনোমতেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় স্বজনদের খোঁজে চমেক হাসপাতালে ঘুরছে নিখোঁজ পরিবারের অনেকেই। স্বজনদের খোঁজ পাওয়ার আশায় এ পর্যন্ত ৪২ জলে ডিএনএ নমুনা দিয়েছে।

সিআইডির তথ্য মতে, নিখোঁজ পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন এবং ছেলে-মেয়ের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। দুই ধরনের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে। একটি হলো মরদেহের ডিএনএ, যেটিকে ক্রাইম সিন বলা হয়। আরেকটি হলো রেফারেন্স ডিএনএ। যেগুলো আত্মীয়স্বজন থেকে নেওয়া হয়। ক্রাইম সিনের সঙ্গে পরিচয় না পাওয়া ১৯ মরদেহের রেফারেন্স নমুনা ম্যাচিং করা হবে। যেটিতে মিলে যায়, মরদেহটি ওই পরিবারের।

সিআইডি থেকে আরো বলা হয়, জিহ্বা বা মুখের লালা, রক্ত এমনকি শরীরের ঘাম বা টুপির সঙ্গে লেগে থাকা ঘামও শনাক্তের জন্য যথেষ্ট। এরমধ্যে রক্তের ডিএনএ টেস্ট এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া গেলেও অন্য পরীক্ষাগুলোর ফল পেতে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

এদিকে নিখোঁজ ছেলে মাঈনুদ্দিনকে খোঁজতে শুক্রবারও চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছিলেন বাবা হেমায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, আমার ছেলে গাড়িচালক। ঘটনার দিন ঢাকার আশুলিয়া থেকে গাড়িতে করে পণ্য নিয়ে এসেছিলেন বিএম ডিপোতে। সেখানে বিস্ফোরণের পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলের খোঁজে আমি ডিএনএ নমুনা দিয়েছি। তার বাড়ি নোয়াখালী বলে জানান তিনি।

একইভাবে খোঁজ মিলছে না কাভার্ডভ্যান চালক মো. শাহজাহানের। শুক্রবার সকালে ছবি বুকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে বাবার খোঁজে আসেন ১০ বছরের ছেলে রিহান আহমেদ। সাথে ছিলেন তার মামা লিটন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর থেকে শাহজাহানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ। তার সঙ্গে এক সহকারীরও হদিস মিলছে না। খোঁজ পেতে তাই ছেলের নমুনা দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়ি ফটিকছড়িতে। থাকেন ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকায়।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে গত শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিপোতে প্রথম কন্টেইনার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণে কাজ শুরু করে। এরমধ্যে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাতে দফায় দফায় বিস্ফোরণে ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারী, এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও মারা যায়। রোববার সকাল থেকে একের পর এক মরদেহ আনা হয় চমেক হাসপাতালে। সোমবার পর্যন্ত লাশের এই মিছিল চলে। মঙ্গলবার লাশ আসা কিছুটা কমলেও বিকেলের দিকে আরো দু‘জনের মরদেহ মিলে। এ নিয়ে লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬। আর আগুনে দগ্ধ ও আহতদের সংখ্যা দাড়ায় দুই শতাধিক। যাদেরকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় চমেক হাসপাতালে। এ অবস্থায় ডিপোর উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তা নূরুল আলম এই ঘোষণা দেন।

ব্রিফিংয়ে নূরুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে ৫ দিনে মোট ৪৬ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরমধ্যে পরিচয় শনাক্ত হয়েছে ২৭ জনের। বাকিদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। এখন পর্যন্ত আহত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২ জন সদস্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং দুজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। নিখোঁজ আছেন তিনজন সদস্য। এ পর্যস্ত চিকিৎসা নিয়ে স্টেশনে ফিরেছেন চার সদস্য। এছাড়া দুর্ঘটনায় পুলিশের ১০ সদস্যও আহত হয়েছেন। এর বাইরে আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন