১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সুন্দরবনে মানব পাচারের মূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৪০ অপরাহ্ণ, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

সুন্দরবনে মানব পাচারের মূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চল প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেখানকার অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা ওই অঞ্চল থেকে মানব চার করে থাকে।

এই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানব পাচার সনাক্তকরণ এবং দোষী সাব্যস্ততা হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে ভুক্তভূগিদের সমস্যা। গত ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মানব পাচার অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্তের সংখ্যা ২৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় কমেছে ৫৬ শতাংশ।

এছাড়াও, নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলিতে আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মানব পাচার অপরাধ সনাক্তক্তের হার ১১ শতাংশ কমেছে। মানব পাচার বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন-২০২২ এমন তথ্য বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনটি ‘দ্যা গ্লোবাল এ্যাকশন এ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পার্সন এ্যান্ড দ্য স্মাগ্লিং মাইগ্রান্টস্- বাংলাদেশ (গ্লো.এ্যাক্ট বাংলাদেশ) প্রকল্পের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, সুন্দরবন অঞ্চলটি প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, যেখানে অতিমাত্রায় ঘূর্ণিঝড় ঘটার ফলে অধিবাসিরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেখানকার খাদ্য উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলে। যে কারণে ২০১৪ সালে ওই অঞ্চলের ৪৩ শতাংশ অধিবাসী দারিদ্রসীমার নীচে নেমে আসে।

পাচারকারীরা সেখানকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অধিবাসীদের ক্ষতির সুযোগ নিয়ে থাকে এবং সেখানে জোড়পূর্বক শ্রম, শিশুশ্রমসহ মানবপাচার ঘটে। তবে সুন্দরবন এলাকায় কত শতাংশ মানবপাচার ঘটে, এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে মানব পাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধার করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষমতা আরও কমেছে। মহামারী চলাকালীন যৌন শোষণের জন্য পাচারের খুব কম ঘটনা সনাক্ত হয়েছিল। কারণ পাবলিক স্পেসগুলি বন্ধ ছিল।

বিধিনিষেধের কারণে পাচার আরও গোপন হয়েছে এবং ভুক্তভুগিদের অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে পাচারের শিকারদের সনাক্ত করা কঠিন হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৪১টি দেশের মানব পাচার বিষয়ক তথ্য আঞ্চলিক ভিত্তিতে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “মানব পাচারের প্রবণতা ও ধরণে কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উদীয়মান প্রভাব উদ্বেগজনক।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরকে মানব পাচার শনাক্ত করার সক্ষমতা জোরদার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। মানব পাচার প্রতিরোধে ভুক্তভূগি -বান্ধব ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা তৈরিতে জোড় দেয়া দরকার।

” ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ায়র আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা বলেন, “অনলাইনে মানব পাচারের নিয়োগ এবং সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে মানব পাচারের মত বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে।

করোনা মহামারীতে এই পরিস্থিতি বেড়েছে। যেখানে মানব পাচারকারীরা আরও প্রযুক্তি-সচেতন হয়ে উঠছে। তবে সফলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা মানব পাচারকারীদের সনাক্ত, তদন্ত এবং বিচার করতে পারি।”

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস বলেন, “আমাদের অবশ্যই টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিক্রিয়া সহ দারিদ্র্য এবং পদ্ধতিগত বৈষম্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করা দরকার।”

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম) সমন্বয়ক আবদুসাত্তর এসোয়েভ বলেন, “বাংলাদেশের জন্য, মানব পাচার একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়।

মানব পাচারের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং প্রতিবেদন মানব পাচারের মোকাবেলা করার জন্য প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি ও প্রোগ্রামিং বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করে। এগুলো সরকার ও নীতিনির্ধারক সহায়তা করে।

মানব পাচার সংক্রান্ত গ্লোবাল রিপোর্ট ২০২২-এ বিশ্ব, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে মানব পাচারের প্রবণতাগুলির একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা ও প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে।”

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন