২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সুপেয় পানি সংকট ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

সুপেয় পানি সংকট ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে চলেছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের জেলেপল্লীর ১৫ হাজার জেলে। জনবিচ্ছিন্ন চরগুলোতে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বালুময় চরে ছোট ছোট কূপ খনন করে পানি উত্তোল করে থাকে জেলেরা। শুঁটকি মৌসুমের পাঁচ মাস অবস্থানকালে নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত এবং দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের সঠিক চিকিৎসা জোটে না। জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করলেও সরকারিভাবে তাদের চিকিৎসাসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিবছর দু-চার জন জেলের মৃত্যু হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সমগ্র সুন্দরবন থেকে বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় তার বড় অংশটিই আসে দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী থেকে। দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির অধীনে আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শ্যালার চর, মেহের আলীর চর ও নারকেলবাড়িয়াসহ সাগরমোহনার মোট ছয়টি চরে শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছর নভেম্বরের এক তারিখ থেকে শুরু হয় শুঁটকি উৎপাদনের প্রস্তুতি। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। মৌসুমের শুরু থেকেই বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, খুলনার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা করে শুঁটকি তৈরীর কাজ। এই শুঁটকি শিল্পকে ঘিরে দুবলার চরের ছয়টি চরে পাঁচমাস ধরে চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে নিয়োজিত জেলে এবং তাদের সহায়ক বিভিন্ন পেশাজীবী মিলে ১৫ সহস্রাধিক লোক অবস্থান করে শুঁটকি পল্লীগুলোতে। এবছর ছয়টি চরে বনবিভাগ থেকে এক হাজার ২৫টি অস্থায়ী জেলে ঘর নির্মানের অনমোদন দেওয়া হয়েছে।
আলোর কোল শুঁটকিপল্লীর বহদ্দার পঙ্কজ বিশ্বাস, অফিস কিল্লার সহিদর মল্লিক ও মোজাহার হোসেন জানান, এ বছর ডায়রিয়া, আমাশয়সহ চরে পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। কূপ খনন করে যে পানি পাওয়া যায় তাদিয়ে হাজার হাজার জেলের পানি চাহিদা পুরণ হয়না। তারা পুকুর খনন, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।

দুবলার চরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারমেন গ্রুপ’এর সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল আহমেদ বলেন, দুবলা জেলেপল্লীতে নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করছে জেলেরা। বিশেষ করে খাবার পানি চরম সংকট এখানে। ১৯৯৬ সালে আমার বড় ভাই ফিশারমেন গ্রুপের প্রয়াত সভাপতি মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ চরের জেলেদের পানি সমস্যার কথা চিন্তা করে মেহের আলীর চের একটি পুকুর খনন করেছিলেন। শুঁটকি উৎপাদনকরাী জেলেরাসহ সারাবছরই সাধরাণ জেলেরা ওই পুকুরের মিঠা পানি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু সেই পুকুরটির পার ভেঙে সাগরের নোনা পানি ঢুকে পড়ায় তা আর ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। বর্তমানে বালুর চরে ছোট ছোট কূপ খনন করে সামান্য পরিমান পানি উত্তোলন করে কোনোরকম জীবন চলছে চরবাসীর। যার ফলে এবছর পেটের পিড়ার প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, চরে সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জেলেরা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুঁটকি মৌসুমে পল্লী চিকিৎসক নিয়ে আসে। তা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ সারলেও বড় ধরণের কিছু হলে সমস্যায় পড়েত হয়। দুর্গম সাগর থেকে দ্রুত কোথাও নেওয়ার সুযোগ থাকেনা। তাছাড়া, সাইক্লোন শেল্টারগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাতে মানুষ বসবাসের কোনো সুযোগ নেই। দুবলার শুঁটকি পল্লী থেকেই সুন্দবনের রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস্য। তাই জেলেদের সার্থে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেন্টার নির্মান, ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও সুপেয় পানির জন্য পুকুর খননের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন জানান, দুবলার জেলেপল্লীতে বনবিভাগের একটি টহল ফাঁড়িসহ র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের ক্যাম্প রয়েছে। ছয়টি চরে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এগুলো সিডরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও দুর্যোগ মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয় জেলেরা। বনবিভাগের অফিস ভবনটিও বঙ্গোপসাগরে বিলিন হওয়ার পথে।

তিনি আরো জানান, দুবলার জেলে পল্লীতে জেলেদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের জন্য আরো সাইক্লোন শেল্টার নির্মান প্রয়োজন। বিশাল এ ভাসমান জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুঁটকি মৌসুমে যাতে জেলেপল্লীতে সরকারিভাবে ভ্রাম্যমান সিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, সেব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব রাখা হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন