২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সেই কেবিন ক্রুর বাসায় গিয়ে হুমকি, থানায় জিডি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৫ অপরাহ্ণ, ২১ নভেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: কেবিন ক্রুদের যৌন হয়রানির পর এবার এক কেবিন ক্রুকে অভিযুক্ত পাইলট ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বুধবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় ভুক্তভোগী কেবিন ক্রু একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ডায়েরি নম্বর ১৪৭১।

জিডিতে বলা হয়, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ওই কেবিন ক্রুর উত্তরার বাসার নিচে একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি আসে। গাড়ি থেকে তিনজন নেমে কেবিন ক্রুকে খবর দেয়ার জন্য দারোয়ানকে জানান যে, তার অফিস থেকে গাড়ি এসেছে ফ্লাইটে যেতে হবে। দারোয়ান এই তথ্য ওই কেবিন ক্রুর বাবা-মাকে গিয়ে জানান। এ সময় তার বাবা-মার সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা বিমানের মোটর ট্রান্সপোর্ট (এমটি) বিভাগে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চান। এরই মধ্যে প্রাডো গাড়িটি দ্রুতবেগে চলে যায়।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিমানের এক কেবিন ক্রু একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাকে হুমকি দেয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য এসআই তাজুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছি।

এসআই তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ আমার ছুটি। আগামীকাল নাইট করব এবং কাল থেকে বিষয়টি তদন্ত করব আশা করি।

এদিকে একজন কেবিন ক্রু এ প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, কেবিন ক্রুদের ফ্লাইটে কোনো নিরাপত্তা নেই। সম্প্রতি ককপিটে পাইলটদের যৌন হয়রানির শিকার হন দুই নারী কেবিন ক্রু। ঘটনার পর এখনও জড়িত পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়েছে। ঘটনার নায়ক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ। তার বিরুদ্ধে দুই কেবিন ক্রু এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী কেবিন ক্রু এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, এই নারীলিপ্সু পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি না হলে আমরা অনেকে চাকরি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ক্যাপ্টন ইশরাতরা দুই সহোদর বিমানের পাইলট। দুই ভাই-ই চরিত্রহীন। আরেক ভাই ক্যাপ্টরন ইমরানও মদ ও নারীলিপ্সু। এক নারী পাইলটের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখার পর বিমানেরই সিনিয়র পাইলট স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেন।

বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিস শাখা সূত্র জানায়, গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম হয়ে আবুধাবিগামী বিজি-১২৭ ফ্লাইটের ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইশরাত। ফ্লাইটে চিফ পার্সার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খুকু। ওই ফ্লাইটে দুই কেবিন ক্রু ছিলেন। ক্যাপ্টেন ইশরাত ককপিটে নিয়ে তাদের কুপ্রস্তাব দেন।

অভিযোগে এক কেবিন ক্রু বলেছেন, ফ্লাইটের চিফ পার্সার খুকু তাকে পেছনে পজিশন দেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন ইশরাতের নির্দেশে তাকে আবার সামনের পজিশনে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সামনে পজিশন পাওয়া কেবিন ক্রু ককপিটে সার্ভিস দেন। ওই ক্রু ককপিটে সার্ভিস দিতে গিয়ে দেখেন, ক্যাপ্টেন ইশরাত সিটে বসে মদ খাচ্ছেন। ওই সময় সিট বেল্ট খুলে ওই ক্রুকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন তিনি। ওই ক্রু তাৎক্ষণিক ককপিট থেকে বেরিয়ে বিষয়টি চিফ পার্সারকে জানান। চিফ পার্সার পুনরায় ওই ক্রুকে পেছনে পাঠাতে চাইলেও ক্যাপ্টেন ইশরাত বাধা দেন। পরবর্তীতে আবারও ওই ক্রু ককপিটে সার্ভিস দিতে গেলে ক্যাপ্টেন ইশরাত অ্যাপ্রোন খুলে সার্ভিস দিতে বলেন। তখন ইশরাত মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে জানান ওই ক্রু। চট্টগ্রামে ফ্লাইট বিরতিকালে হোটেলে ওই ক্রুদের পাশাপাশি রুম নেয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী আরেক ক্রু আমাদের যা বলার তদন্ত সেলের কাছে বলেছি। আমরা বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু তদন্ত টিমের কাছে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে নারী পরিষদের প্রতিনিধিও ছিলেন। এর বাইরে গণমাধ্যমকে আর কিছু বলব না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্লাইট সার্ভিসে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তা জানান, বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসে কর্মরত বেশিরভাগ কেবিন ক্রু ক্যাপ্টেন ইশরাতের সন্তানের বয়সী। তারপরও তিনি সন্তানতুল্য মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করেন।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন