২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সেই ৫ পুলিশের মিলমিশ ইয়াবা সিন্ডিকেট

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন রিপোর্ট:: চেকপোস্টে জব্দ করা ইয়াবা ভাগবাটোয়ারার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পুলিশের ওই সদস্যরা বলেছেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের গুদারাঘাট চেকপোস্টে জব্দ করা ইয়াবার একটি বড় অংশ তারা গাজীপুরের কোনাবাড়ীর দুই মাদক ব্যবসায়ী শাহীন ও মফিজের কাছে বিক্রি করেন।

এই দুই মাদককারবারির হাতে ইয়াবার চালান তুলে দেন গুদারাঘাট চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে শাহীন ও মফিজের কাছে দেড়শটি ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ৫ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৩ জনকে ৩ দিন এবং ২ জনকে ২ দিন করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে উত্তরা পূর্ব থানা।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার ৫ পুলিশ সদস্য ইয়াবা জব্দ করার পর বিক্রি করে দেন। তারা রাজধানী ও গাজীপুরের কয়েক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করেই ইয়াবা উদ্ধার ও বিক্রি করে আসছিলেন। পুলিশের তদন্তকারীরা ওই পুরো সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে ৫ পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ ছাড়া প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। কোনো নম্বর সন্দেহ হলে ওই ফোন ব্যবহারকারীর বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৫ পুলিশ সদস্যকে।

তারা জানিয়েছে, লোভের বশবর্তী হয়েই তারা জব্দ ইয়াবা বিক্রি করেছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর গুদারাঘাট চেকপোস্টে এক ইয়াবা কারবারির কাছ থেকে এক হাজারের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে ওই আসামিকে তারা ছেড়ে দেন। এর পর জব্দ করা ইয়াবা নিজেদের হেফাজতে রাখেন। পরে ১৫০টি গাজীপুরের ইয়াবা কারবারি শাহীন ও মফিজের কাছে বিক্রি করেন কনস্টেবল শরীফুল। ওই দুই ইয়াবাকারবারিকে ধরতে উত্তরা পূর্ব থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাদের ধরতে পারলে ঘটনার অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা পুলিশের তদন্তকারীদের।

গত ১১ সেপ্টেম্বর গুলশানের গুদারাঘাট চেকপোস্টে এক ব্যক্তিকে ধরার পর দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা ইয়াবা রেখে টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেন। গত রবিবার উত্তরায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ১-এর একটি ব্যারাকে তারা সেই ইয়াবার একটি অংশ ভাগবাটোয়ারা করছিলেন। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এপিবিএন ১-এর কনস্টেবল প্রশান্ত মণ্ডল, রনি মোল্যা ও শরিফুল ইসলাম এবং নায়েক জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়। তাদের তথ্যানুযায়ী সেদিন চেকপোস্টের নেতৃত্বে থাকা গুলশান থানার এএসআই মাসুদ আহমেদ মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযান চালায় এপিবিএনের আরেকটি টিম। পরে উত্তরা পূর্ব থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এসআই মো. আবু জাফর। গত সোমবার গ্রেপ্তার ৫ পুলিশ সদস্যকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, তারা চেকপোস্টের ইনচার্জ গুলশান থানার এএসআই মাসুদ আহমেদ মিয়াজীর নির্দেশেই ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আসামিকে ছেড়ে দেন। ওই এএসআইয়ের নির্দেশেই পরে জব্দ করা ইয়াবার চালানটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এর মধ্যে কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম ১৫০টি ইয়াবা ভাগে পেয়েছিলেন, যা তিনি পূর্বপরিচিত ইয়াবাকারবারি গাজীপুরের কোনাবাড়ীর আমবাগন মিতালী ক্লাব এলাকার শাহিন ও নছের মার্কেট এলাকার মফিজের কাছে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে জব্দ করা ইয়াবার মধ্যে এএসআই মাসুদ আহমেদ মিয়াজী নিজের কাছে ২০০ পিস ইয়াবা রেখে দেন। নায়েক জাহাঙ্গীর আলম পান ১৫০টি। কনস্টেবল রনি মোল্যাও ১৫০টি ইয়াবা ভাগে পান। এই ৫ পুলিশের মধ্যে কনস্টেবল শরীফুল ইসলাম অনেক আগে থেকেই ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের তদন্তকারীরা তথ্য পেয়েছেন। এএসআই মাসুদ ও নায়েক জাহাঙ্গীর তাদের ভাগের ইয়াবা কোথায় বিক্রি করেছেন- এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছেন পুলিশের তদন্তকারীরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পরিতোষ চন্দ্র বলেছেন, গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভাগে পাওয়া ইয়াবা তাদের কে কোথায়, কার কাছে বিক্রি করেছেন তা জানার চেষ্টা চলছে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন