২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

সেনাবাহিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিজিবি সদস্যর প্রতারণা: লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:১৯ অপরাহ্ণ, ২৫ জুলাই ২০২১

সেনাবাহিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিজিবি সদস্যর প্রতারণা: লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের যুবকদের সেনাবাহিনী চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) এক সদস্য লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয় মগড় ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের অন্তত ১০ যুবকের পরিবারের কাছ থেকে ২/৪ লাখ করে ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ নিলেও শেষ পর্যন্ত কাউকে চাকরি দিতে না পারায় নানান প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন জামাল চৌধুরী নামের এই বিডিআর সদস্য। বছরের পর বছর ঘুরে চাকরি না পেয়ে আশাহত যুবকেরা এলাকায় বেকার জীবন যাপন করছেন। এবং ধার-দেনা করে এনে দেওয়া টাকার সুদ গুণছেন পরিবার। এই বিষয়টি এতদিন লুকোচাপা থাকলে সম্প্রতি জামাল চৌধুরীর প্রতারণার বিষয়টির কিছুটা আলামত পেয়ে যুবকেরা সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ তাদের অর্থ ফিরে পেতে থানা পুলিশসহ মিডিয়ার দ্বারস্থ হতে শুরু করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিডিআর সদস্য জামাল চৌধুরী ৪ বছর পুর্বে তার ছেলে সেনাবাহিনীতে সুপারিশ করে চাকরি দিয়েছেন, এমন কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি তাদের সন্তানের চাকরির জন্য যোগাযোগ করেন। বিপরিতে জামাল চৌধুরী প্রথমে ২/৩ করে টাকা নিলেও পরবর্তীতে আরও অন্তত ৫/৭ জনের কাছ অর্থ নেন। কিন্তু কয়েক বছর ঘুরেও তাদের চাকরি না হলে চাকরিপ্রত্যাশীদের স্বজনেরা টাকা চাইতে শুরু করেন। এতে জামাল চৌধুরী বিপাকে গেলে, এ থেকে রক্ষা পেতে তিনি একের পর কৌশলসহ প্রতারণার আশ্রয় নেন। কিন্তু এতেও শেষরক্ষা হয়নি। তার সকল কৌশলই ধরা পড়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের।

চাকরিপ্রত্যাশী এক যুবক জানান, তাকে সেনাবাহিনী চাকরি দেওয়ার কথা বলে বছর দুয়েক পুর্বে প্রথমে এক লাখ টাকা নেন জামাল চৌধুরী। এরপর কিছুদিন না যেতেই আরও এক লাখ দাবি করলে সেই টাকাও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শোনা যায়, আশপাশে আরও অন্তত ১০ যুবককে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়েছেন। কিন্তু এর পরে কয়েক বছর পেড়িয়ে গেলেও কাউকে চাকরি দিতে পারেননি।

অপর এক যুবক জানান, সর্বশেষ চাকরি দিতে না পেরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সই-স্বাক্ষর জাল করে তিনি বেশকিছু কাগজপত্র ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সকল কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে জাল বলে প্রমাণিত হয়। একে একে সকলের কাগজপত্র পরীক্ষা করে তাদেরগুলোও ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়েছে। মূলত এর পরপরই চাকরিপ্রত্যাশী যুবকেরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং চিহ্নত এই প্রতারকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরে বিডিআর সদস্য তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন এবং ফোন দিলে সহজে রিসিভ করেননি। এবার কোরবানির ঈদে বাসায় আসলে যুবকেরা তার কাছে গেলে এখন হাতিয়ে নেওয়ার ফেরত দেই, দিচ্ছি বলতে শুরু করেন। এনিয়ে এক যুবকের পরিবারের সাথে বাকবিতন্ডাও হয়।

যুবক নাঈম হোসেন জানান, মেস ওয়েটার পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম নিলেও পরবর্তীতে আরও ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে এই টাকা দিলেও কোনো সুখবর না আসলেও পরবর্তীতে আরও টাকা দাবি করেন জামাল চৌধুরী।

যুবকের দাবি, তার বাবা অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে জামাল চৌধুরীকে টাকা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি চাকরি দেওয়ার নামে এক ধরনের প্রতারণা শুরু করেছেন। এমনকি ডাকযোগে তাকে যে সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, তা ভুয়া। এখন তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে দেই, দিচ্ছি বলে প্রতারণা শুরু করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে জামাল চৌধুরীর মুঠোফোনে কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ফোন ধরে তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে একজন বলেন বাবা বাসায় নেই। কিন্তু এসময় ফোনের ওই প্রান্ত থেকে অনুমান করা গেছে যে, কোনো এক ব্যক্তি তরুণীকে কিছু বলতে শিখিয়ে দিচ্ছেন।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন