নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের উজিরপুরে এক স্কুলছাত্রীকে টানা এক ২ বছর ধরে উত্ত্যক্তর পরে এবার এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এক বিবাহীত যুবলীগ নেতা। ফলে ওই শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে যাওয়া ও প্রাইভেট বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থী ও তার পরিবার। উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বৈরকাঠি গ্রামে এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের ভ‚মিকা উদাসীন। ওই বখাটে ক্ষমতাসীন দলের পদধারী নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবার।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বৈরকাঠি গ্রামের ওই শিক্ষার্থীকে গত ২ বছর ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে একই গ্রামের সুজন মোল্লা উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। সুজন মোল্লা ওই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও বৈরকাঠি গ্রামের হক মোল্লার ছেলে। স্থানীয় পঞ্চগ্রাম বাজারে সুজন মোল্লার সজনী কসমেটিকস স্টোর নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সময়ের আলোকে জানায়, সে স্থানীয় পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। নবম শ্রেণি থেকেই স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে বখাটে যুবলীগ নেতা সুজন মোল্লা তাকে প্রথমে প্রেম ও পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। বখাটে সুজনের উত্ত্যক্তের বিষয়টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে জানিয়ে কোনো সুফল না পেয়ে ৬ থেকে ৭ মাস আগে সে (শিক্ষার্থী) স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে তার (শিক্ষার্থী) বাবা-মা বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাদের কাছে জানায়। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। বরং যুবলীগ নেতা সুজন মোল্লার দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে অভিযোগ দেওয়ায় সে (সুজন) আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরপর তাদের (শিক্ষার্থী) বাড়িতে গিয়ে সুজন বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করে। এতে ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে আরও জানান, সুজনের হুমকি-ধামকির এক পর্যায়ে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পূর্ব মূহূর্তে তাকে (শিক্ষার্থী) তার বাবা ঢাকায় নিকট আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে সেখানে তিন থেকে চার মাস অবস্থান করেন। ফলে সে (শিক্ষার্থী) নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও দিতে পারেনি। সম্প্রতি গত কয়েকমাস আগে বাড়িতে ফিরে স্কুলে যাওয়া শুরু করলে বখাটে সুজন আবারও তাকে (শিক্ষার্থী) উত্ত্যক্ত করে। পাশাপাশি তার (সুজন) সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন না করলে তাকে (শিক্ষার্থী) এসিড ছুড়ে পোড়াবে বলে হুমকি দেয়।

বখাটে যুবলীগ নেতা সুজনের এমন হুমকির বিষয়টি বাবা-মা’কে জানালে পরিবার থেকে গত ৩ মাস ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী।

স্কুলছাত্রীর বাবা আনোয়ার বেপারি অভিযোগ করে বরিশালটাইমসকে জানান, ‘সুজন মোল্লা সরকার দলীয় লোক। সে অনেক প্রভাবশালী। তাই আমি ভয়ে আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সেই সাথে বিষয়টি মেয়ের স্কুল পরিচালনা কমিটি ও গুঠিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সত্তার মোল্লার কাছে জানিয়েছি। দেখি তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন কী না।’

এদিকে আব্দুস সত্তার মোল্লা ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না জানিয়ে বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পরিবার তাকে এসব বিষয়ে কিছু জানায়নি। যার কারণে সুজনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

অভিযুক্ত বখাটে যুবলীগ নেতা সুজন মোল্লা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশালটাইমসকে জানান, ওই স্কুলছাত্রী তাকে ফাঁসাতে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছে। এগুলো সবই মিথ্যা।

গুঠিয়া ক্যাম্পে দায়িত্বরত থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মনিরুল ইসলাম বরিশালটাইমসেকে জানান, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি শুনেছেন এবং ওই এলাকায় খোঁজ খবর নিয়েছেন। তবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারিবেরিশালটাইমসকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে সুজন এ ধরনের কর্মকান্ড করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সাথে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অথবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বখাটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’