২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

‘স্বপ্নেও ভাবি নাই যে এমন একটা ঘর পামু’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০৮ অপরাহ্ণ, ১৬ জুন ২০২১

‘স্বপ্নেও ভাবি নাই যে এমন একটা ঘর পামু’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> নাম লিপিকা রাণী, ঠিকানা গোপালগঞ্জ জেলা, পরিবারে সবাই দেশের বাহিরে থাকতেন। বাবা সুরেশ চন্দ্র হিরা আমেরিকা প্রবাসী, ধনীর ঘরেই জম্ম হয়েছিলেন তার। একদিন সবই ছিলো, ভালো কাপড়, ভালো খাবার, সামাজিক অবস্থান।

কিন্তু লিপিকা রাণীর বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার ছায়া। বিয়ে হয় গরীব একটি ছেলের সাথে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় লিপিকা রাণী। সংসার জুড়ে আসেন ১টি মেয়ে ও ১টি ছেলে। পরিবার ছিলো আলোকিত স্বর্গ। এই লিপিকতা রাণী স্বামীর ভিটা প্রায় ১৩ বছর আগে ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে জীবিকার তাগিদে আশ্রয় নেন বরিশালের গড়িয়ারপাড় কলস গ্রামে অন্যের জমিতে। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা করতে নি:স্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। কোন রকম দুই বেলা খাবার যোগাতে হীমসীম খেতে হয়েছে লিপিকা রাণীকে। নিজের শরীরে নানা রোগ নিয়ে একমুঠো খাবার যোগাতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়েছেন। সন্তান ও স্বামীর মুখে দু’বেলা খাবার যোগার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তাকে চরাঞ্চলের বিরূপ প্রাকৃতির সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। কখনওবা ভিক্ষা করে, কখনওবা দিনমজুরের কাজ, আবার কখনও আয়ার কাজ করেই চলছিল লিপিকা রাণীর সংসার। সর্বদা অভাব-অনটনের সংসারে প্রতিবছর বন্যার পানিতে প্লাবিত জরাজীর্ণ অন্যের জমিতে কুড়েঁঘর তার কষ্টের মাত্রাটি বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ।

ভেবেছিলেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে একটু কষ্ট ঘুচাবেন। কিন্তু বিয়ে ঠিকই হলো, বিয়ের কয়েক বছর পর দুই সন্তানসহ জামাতা মেয়েটিকে তার কুড়েঘরে রেখে চলে যায়। লিপিকা রাণীর প্রতিনিয়ত অমানুসিক শারীরিক পরিশ্রম সেই সাথে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে বয়স যখন ৪০ ছুইছুই, যখন শরীর কোন ধরনের কায়িক পরিশ্রম মেনে নিতে চায় না; সে জীবন বাচানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পরে, প্রায় ৮বছর ধরে ভিক্ষা করছেন। মেয়ে, ছেলে, স্বামী ও নাতিদের নিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার নতুন যুদ্ধ। দুজনের সংসারে দু’বেলা ভাত-ডাল এর সংস্থান করাই যেখানে জীবন মরণ সমস্যা, সেখানে মাথা গোজার জন্য একটা নিরাপদ আবাসন লিপিকা রাণীর জন্য ছিল এক স্বপ্ন- বিলাস। চরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালের তপ্ত বালু, কালবৈশাখীর তান্ডব, বর্ষার প্রবল বর্ষণের সাথে বন্যার পানি উঠার ঝুঁকি, শীতে উত্তরের কণকণে বাতাস সবাই যেন লিপিকা রাণীর কুঁড়েঘরটাকে প্রতিনিয়ত তাচ্ছিল্য করছিলো। ঠিক তখনি মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প ২তে লিপিকা রাণীর জন্য একটি ঘর বরাদ্দ দেয় বরিশাল জেলা প্রশাসক ও বরিশাল সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা । আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ক শ্রেণির ভূমিহীন/গৃহহীনদের জন্য দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দকৃত ঘরের মধ্যে এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ঘর উপহার পান লিপিকা রাণী এবং অর্থায়নে ও বাস্তবায়নে ছিলেন, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখা।

এদিকে লিপিকা রানী নতুন ঘরে কেমন আছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ‘স্বপ্নতো ভাবি নাই যে এমন একটা ঘর পামু’। ঘরের আবেদন নিয়া চেয়ারম্যান মেম্বররের কাছে অনেকেরবার গেছি, কোন কাজ হয় নাই। কিন্তু সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা স্যার মোর আবেদন দেখে খোঁজ নিয়া মোরে একটা ঘর দেছে। আর নিবার্হী কর্মকর্তা স্যারে কইছে মোর ঘরে কারেন্ট ও ডিসি স্যারে মোরে একটা দোকান দিয়া দেবে। মোর তো কোন টাহা নাই। ভাগ্য আজ মোরে এহানে আনছে। মুই শেখ হাসিনারে ধন্যবাদ জানাই।

এই প্রসঙ্গে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান জানান, অসহায় লিপিকা রাণী ঝুঁপড়ি ঘরে স্বামী নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন। বিষয়টি কোনো এক মাধ্যম নিশ্চিত হয়ে তাকে প্রাথমিক ভাবে একটি ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। এবং সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন