১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম

স্বামীর খোঁজে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন পটুয়াখালীর শিরিন আক্তার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৫ অপরাহ্ণ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

স্বামীর খোঁজে দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন পটুয়াখালীর শিরিন আক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শিশু ছেলেকে কোলে নিয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুরছেন তিনি।

কখনও মর্গের সামনে, কখনও তথ্য ডেক্সে আবার কোনো সময় যাচ্ছেন শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যদি প্রিয়জয়ের খোঁজ পাওয়া যায়!

হন্য হয়ে খোঁজাখুঁজি করার সময় বিলাপ করছিলেন, আমার স্বামীরে আইন্যা দেন। পুরা শরীর না পাইলেও চলবো, কোনো রকমের হাড়-গোড় পাইলেও মনডারে সান্ত্বনা দিতে তো পারবে! তার কপালে যেনো সন্তানের মাটিটা অন্তত জুটে।

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে সকাল থেকেই দেখা গেছে, ছেলেকে কোলে নিয়ে অনবরত কেঁদে চলেছেন শিরিন।

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন ওই এলাকার রিকশাচালক নূর জামান (৪০) নিখোঁজ। তার আশঙ্কা, ওই অগ্নিকাণ্ডের শিকার হতে পারেন তার স্বামীও।

তাই এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢামেক হাসপাতালে এসে স্বামীর খোঁজ করছেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বেলপাড়া গ্রামে হলেও এখন স্বামীর সঙ্গে থাকেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিরিন আক্তার বলেন- আমার স্বামীরে কেউ খুইজ্যা (খোঁজে) দেন। লাশ না হোক, হাড়-গোড় নিয়ে হলেও আমি বাড়ি যাবো। যাতে আমার ছেলে তার বাবার কবরে শেষ মাটি দিতে পারে।

‘এখন পর্যন্ত তিন হাসপাতালের লাশ ঘরেই খোঁজ নিয়েছি। ৪০টার মতো লাশ দেখছি কিন্তু তারে তো পাইলাম না,’ বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

শিরিনের ভাষ্য, তারে আমি চিনমু কেমনে? সব লাশই তো এমনভাবে পুড়ছে যে কারো চেহারা চিনা (চেনা) যায় না। আপনারা আমার তারে আইন্যা দেন। পায়ে পড়ি আপনাদের।আমার জন্য কিছু একটা করেন।

এদিকে সকালে নূর জামানকে শনাক্ত করার জন্য তার ছেলের গালের মাংস ও স্ত্রী শিরিন আক্তারের রক্ত সংগ্রহ করেছেন সিআইডি টিমের সদস্যরা। তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে নিখোঁজ নূর জামানের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে।

এ সময় শিরিনের পাশে থাকা নূর জামানের বোন সাংবাদিকদের জানান, গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে খেয়ে রিকশা নিয়ে রেব হন নূর জামান।সাধারণত বিকেলেই বাসায় ফেরেন। কিন্তু ওইদিন ৯টার দিকেও ফেরেননি। তখন তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘বারবার কল দেওয়ার পর সাড়ে ৯টার দিকে ভাই (নূর জামান) ফোন ধরে। জানায়, সে জ্যামে আছে চকবাজারে-বলেই ফোন কেটে দেয়। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নূর জামানের বোন বলেন, ‘রাত ১১টায় টিভিতে খবর দেখি আগুনের। পরে ওইদিন রাত ১২টায় আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে আসি ঢাকা মেডিকেলে (ঢামেক হাসপাতাল)। সেখানে সারারাত ছিলাম। ভাইরে খুইজ্যা পাই নাই। শুক্রবারও খোঁজ করছি, বিকালে চইল্যা যাই। আইজ আবার সকালে আইছি।

‘ডিএনএ নমুনা দিতে বলছে, আমরা নমুনা দিয়েছি। এখন মিটফোর্ড হাসপাতালে যাবো। লাশ দেখতে, যদি আমার ভাইরে পাই।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (ডিএনএ পরীক্ষক) মাসুদ রাব্বি সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, আজ সকালে একজনের জন্য দুইজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে, সকাল পর্যন্ত মোট ১৯ জনের বিপরীতে ৩২জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া যে মরদেহগুলো শনাক্ত হয়নি, সেগুলো শনাক্ত করতে স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নেওয়া হবে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার পর্যন্ত ৪৮টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।

চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।’’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন