২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

হতাশ হাসানাত, বিবর্ণ বরিশাল

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩০ পূর্বাহ্ণ, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

শাকিব বিপ্লব ও হাসিবুল ইসলাম:: প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে ভাগ্য সহায়ক হলো না বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র। এবারও বঞ্চিত হতে হল কেন্দ্রীয় কমিটিতে নয়া নেতৃত্বের চেয়ারে বসার সুবর্ণ সুযোগ থেকে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল বরিশাল অঞ্চল থেকে অন্তত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’কে প্রেসিডিয়ামের সদস্য করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিত্ব থেকে বারবার বঞ্চিত হওয়ায় আ’লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে হয়তো এবার সদস্য পদে নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে তার যোগ্যতা ও ত্যাগের মূল্যায়ন করার বিষয়টি আলোচনায় বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেওয়া হলেও সেই সম্ভবনা বাস্তবে ধরা দিল না। সেই সাথে হতাশ তার অনুসারীকূল। সবকিছু মিলিয়ে বঞ্ছনার এই অধ্যায়ে সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ে অনেকটা বিবর্ণ রুপ ধারণ করেছে নেতাকে নিয়ে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল না ঘটায়।

উল্লেখ্য গত দুদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে বরিশালেও সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। নানা মাধ্যম থেকে খবর আসছিল আ’লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মুল দুইজন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ব্যতিরেকে বৃহৎ অংশের পরিবর্তনের সম্ভবনা রয়েছে। চমক সৃষ্টিস্বরুপ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করারসমুহ সম্ভবনা নিয়েও জোর আলোচনা চলছিল। সেক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগ থেকে জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সঙ্গত যুক্তিও ছিল। প্রবীণ এই নেতা বারবার সাংসদ নির্বাচিত এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগ তীতিক্ষার পরিচয় দেওয়া সত্তে¡ও আ’লীগের সরকারের মন্ত্রি পরিষদে তিনি উপেক্ষিত থেকে যান। অবশ্য বিগতদিনে মন্ত্রিসভা গঠন ও রদবদলে নানা সময় এই নেতার স্থান পাওয়া নিয়ে বরিশালে তাঁর অনুসারীদের মধ্যে আশা নিরাশার দোলাচালে অপেক্ষার প্রহর তৈরি করে।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ট আত্মীয় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মন্ত্রি পরিষদে বঞ্ছিত হওয়ার ব্যাখ্যাস্বরুপ বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরবর্তীতে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে আসার এক ধরনের প্রতিশ্রæতিমূলক অপেক্ষার সমীকরণে দাঁড়িয়ে রাখে। এনিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা থেকে ক্ষোভও তৈরি হয়। ৯৬ সাথে আ’লীগ সরকার মন্ত্রিসভা গঠনের পর প্রবীণ এই নেতাকে সংসদের হুইপ এবং সর্বশেষ গত নির্বাচনের পর পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ কমিটির আহবায়ক তথা মন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়া হয়। না পাওয়া বেদনা কিছুটা লাঘব হলেও বরিশাল আ’লীগের মধ্যে দাবি উচ্চারিত হচ্ছিল অন্তত এবারের সম্মেলনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে স্থান দেওয়া হোক। সেই বিবেচনায় প্রেসিডিয়ামের সদস্য ভাবা হচ্ছিল। তার সমসাময়িক রাজনীতিবিদ ভোলার তোফায়েল আহম্মেদ ও ঝালকাঠির আমির হোসেন আমুকে এই পদে অসীন করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তাদের আরও স্থান না দিয়ে কমিটির বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ পদে রাখা হয়। আব্দুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডে নিয়ে আসা হয়। এই নেতার ভাগ্য যেন ওই পর্যন্তই সীমারেখা টেনে দিয়েছে। নতুন স্বপ্নের আলোকে কেন্দ্র ও নেত্রীকে বরিশালের মুল্যায়ন অনুধাবনে সম্মেলনের প্রথম দিনে ৫টি লঞ্চযোগে পৌঁছে অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার রাজপথে নেতার পক্ষে শ্লোগান তুলেছিল। প্রেসিডিয়ামের সদস্য করা হোক তা জোরালো উচ্চারিত না হলেও ওই শো-ডাউনের মাধ্যমে এক ধরনের দাবি পরোক্ষভাবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু নয়া কমিটি ঘোষণার পর দেখা যায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’কে পুর্বে জায়গা সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

অপর নেতা বরিশাল সদর আসনের সাংসদ কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীমকে নিয়েও অনুরুপ গুঞ্জন ছিল যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষান্তে এই প্রতিমন্ত্রীও কমিটির কোন স্থরেই স্থান পাননি। আমির হোসেন আমু ও তোফায়েলও বঞ্চিত হয়েছেন। পটুয়াখালীর নেতা সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমানও বঞ্চিতের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য খুলেছে উল্লেখিত নেতাদের থেকে অপেক্ষিত তরুণ বরিশাল সদরের সন্তান জাহাঙ্গীর কবির নানকের। পদোন্নতি হিসেবে যুগ্ম সম্পাদক থেকে প্রেসিডিয়ামের সারিতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বরিশাল রাজনীতির সাথে নানক অতটা সম্পৃক্ত না থাকায় তার পদোন্নতি নিয়ে যতনা আলোচনা তার থেকে বেশি হতাশ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র পদ-পদবীর নতুনত্ব না আসায়।

সন্ধ্যার কেন্দ্রীয় কমিটি খোলসা হওয়ার পর বরিশাল আ’লীগের মধ্যে এক ধরনের নিরবতা ও হতাশার মিশ্রনে বঞ্চিতের জালা ফুটে ওঠা পরিলক্ষিত হয়। কারও কারও মন্তব্য বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য কোন সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে না আসায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ভাগ্যে সীকেও একই রুপ নিল। অবশ্য এই বিবেচনায় সান্ত¦নার ঢেকুর গিলতে হচ্ছে অনুসারীদের।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নিজেও নতুন পদে আসার সম্ভবনা দেখছিলেন। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার সাথে শেষান্তে হতাশ হলেও কৌশলী এই নেতা মুখবয়ে তা স্পষ্ট করতে চাচ্ছেন না। বিপরিতে বরিশালে যে বিবর্ণ রুপ ধারন করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন