হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি: না খেয়ে রোজা রাখলেন অসহায় রিকশাচালক !
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হয়ে অসহায় দরিদ্র এক রিকশাচালক না খেয়ে রোজা রেখেছেন। শামীম নামে ওই রোজাদার রিকশাওয়ালার কাছ থেকে ৭০০ টাকা চাঁদা আদায় করে ময়মনসিংহের ভালুকায় ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজ এলাকায়। এই বিষয়টি নিয়ে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে গত বুধবার (০৫ মে) রাতে স্ট্যাটাস দিলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।
এই জনপ্রতিনিধির স্ট্যাটাস সূত্রে জানা যায়- মঙ্গলবার রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় তিনি দেখেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার গাড়াজান পণ্ডিতবাড়ি গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে রিকশাচালক শামীম অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকটি এসে চেয়ারম্যানকে বলল কোথায় যাবেন? চেয়ারম্যান বললেন, না এখানেই, চেয়ারম্যান যে ভালুকা যাবেন তা বলেননি।
তখন চেয়ারম্যান ওই অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞেস করেন, এত রাতে কি যাত্রী পাওয়া যায়? লোকটি বলল রোজা থেকে সারাদিন রিকশা চালাতে পারি না। তাই রাতেই যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই আর অটোরিকশার কিস্তি দিতে হয়। তবে স্যার কী করব, গত মঙ্গলবার রাতে ৬০০ টাকা ইনকাম হয়েছিল। কয়েকজন পুলিশকে থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে যখন আমি ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ইউটার্ন নেই ঠিক সেই সময় হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আমাকে থামিয়ে বলে অটোরিকশাটি তারা নিয়ে যাবে। একপর্যায়ে হাইওয়ে পুলিশ এক হাজার টাকা দাবি করে।
এরপর অটোরিকশার চালক শামীম অনেক কাকুতি-মিনতি করে হাইওয়ে পুলিশকে বলে স্যার আমি সারাদিন রোজা থেকে কাজ করতে পারি না। তাই ইফতারের পর থেকে ৬০০ টাকা পেয়েছি। টাকা দিয়ে চাল ও ঢাল কিনব, কিন্তু কোনো কথাই তারা শুনল না। শেষপর্যন্ত আমার কাছে আগের ১০০ টাকা ছিল আর ইনকামের ৬০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা হাইওয়ে পুলিশকে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে খালি হাতে বাসায় যাই। পরে না খেয়ে রোজা রেখে আজকেও আবার পেটের দায়ে এত রাতে আছি স্যার।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের প্রশ্ন হলো- আমরা কোথায় বসবাস করি? ফেসবুক স্ট্যাটাসের মন্তব্য কলামে অনেকেই লেখেন- হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে অটোরিকশা, অটোভ্যান, হাইওয়ে মিনি, প্রাইভেটকার, মাইক্রেবাস চালকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এই বিষয়ে ভরাডোবা হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার রাতে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ডিউটিতে ছিলেন এপিএসআই আবু তাহেরের। আমি যোগদান করার পর আমার লোকজনকে বলে দিয়েছি তার যেন কোনো রিকশাওয়ালাকে অযথা হয়রানি না করেন। তারপরও যদি কেউ এ জাতীয় ঘটনা করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের খবর