২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

হিজলার টিপুর এত অর্থ বিত্তের মালিক?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০৮ অপরাহ্ণ, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: এক সময় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর মতো খরচের টাকাও তার ছিল না। সহজ-সরল জীবনযাপন ছিল তার। কিন্তু মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে শুধু পদ-বাণিজ্য ও প্রমোশন, বদলি তদবির ও সরকারি প্রকল্পের কমিশন বানিজ্য করেই তিনি আজ শত-কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। করেছেন নামে-বেনামে কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট।

ইউনিয়ন পর্যয়ে দলের পদ-বাণিজ্য করতে গিয়ে গঠন তন্ত্রের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো পদ দিয়েছে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিদের। ইউনিয়ন কমিটি গঠনেও নিয়েছেন ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। ফলে খুব অল্প সময়ে এখন তিনি শত-কোটি টাকার মালিক। বলছিলাম হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপু সিকদারের কথা। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার হওয়ার পর থেকে যিনি কপাল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তার পাশাপশি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে তিন ভাইও। আওয়ামী লীগ ও তার এলাকার বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীদের নেতারা জানান, এলাকায় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু। দীলয় ক্ষমতা ব্যবহার করেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। হিজলা এবং ঢাকা করেছেন একাধিক বাড়ি ও ফ্লাট। উপজেলা সদরে রয়েছে তার ৩টি বাড়ি। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একই সাথে আওয়ামীলীগের উপজেলা সেক্রেটারী ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন হিজলার টিপু সুলতান। তিনি তখনকার বিএনপি’র সাংসদ মেজবা উদ্দিন ফরহাদকে হিজলা প্রবেশ করতে না দিয়ে একাই রাম রাজত্ব কায়েম করেন। মেঘনায় ১৫-২০টি মাছ ঘাট নিয়ে তার নির্বাচনী প্রতীক ছাতা ব্যবহার করে মেঘনায় আধিপত্য বিস্তার করে জেলেদের বাধ্য করেন তার মাছ ঘাটে মাছ বিক্রী করতে এতে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নেন তিনি। তৎকালীন সময়ের স্বঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা মিজান সরদারের মাধ্যমে গোডাউন সিন্ডিকেট তৈরী করেন। স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ কিংবা মন্দির যাই হোক প্রতিটন চাউলের মুল্য মাত্র ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা ধরিয়ে দিতেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতির হাতে। ততকালিন সময় বাজারে একটন চাউলের মুল্য ৩৫ হাজার টাকা ছিলো। চালের ডিও নিয়ে গোডাউন থেকে চাল উত্তোলন করে বিভিন্ন মোকামে বিক্রী করে কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। উপজেলার যেখানেই হাট-বাজার স্কুল-মাদ্রাসার কমিটি গঠনে বিভিন্ন বাজার, স্ট্যান্ড, খেয়া ইজারা নিতে টাকা দিতে হত তাকে।

প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি: হিজলা ডিগ্রী কলেজের সভাপতি পদে থাকায় বিএনপি পন্থী পুতুল অধ্যক্ষ ওমর ফারুক ও পুত্রা প্রফেসর লোকমান হোসেনকে ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য, কলেজের গাছ বিক্রি ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যকে ৪০ লক্ষ হাতিয়ে নিন সুলতান মাহমুদ টিপু। পরবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হন অধ্যক্ষ ওমর ফারুক। কাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুলের ২০টি স্টলের ভাড়া, তাছাড়া স্কুলের নামে গরুর হাট থেকে গরু প্রতি একশত টাকা করে ১০ বছরে অন্তত এক ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন টিপু সিকদার। মাউলতলা ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি পদে থাকায় মাদ্রাসার নিয়োগ বাণিজ্য ও মাদ্রাসার অভ্যন্তরের বিভিন্ন গাছ বিক্রীর ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। কাউরিয়া বড় মসজিদের সভাপতি পদ থাকায় মসজিদের জন্য কাউরিয়া বন্দরেরর প্রতি মন ধান থেকে এবং সুপারীর বাজার থেকে স্থানীয় সংখ্যা ভি প্রতি ১টাকা করে টাকা করে উত্তোলনকৃত লক্ষ লক্ষ আত্মসাৎ করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের একটি কক্ষ দখল করে নেন। হিজলা ৪শত গভীর পানির কল আসছে, এমন মিথ্যা তথ্য রটিয়ে প্রতিটি পানির কল বাবদ ২৫ হাজার টাকা ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সুলতান মাহমুদ টিপু। এই টাকা এখনও ফেরত পায়নি অনেকেই। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর শেফালী মাহমুদ বড় ভাই সুবাস ঘোষের মাধ্য উপজেলা সদরের চা দোকানদার আবুবকর (রনির বাপ) নিকট একটি কল বাবদ ২৫ হাজার টাকা নেন। টাকা ফেরত না পেয়েই পরপারে চলে যেতে হয়েছে রনির বাপকে।

সুলতান মাহমুদ টিপুর দখল বাণিজ্য: উপজেলা সদরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী জায়গায় এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষা গবেষণা পরিষদের জায়গা দখল করে নির্মাণ করে একটি বাড়ি। খুন্না বন্দরে পাউবোর জায়গা দখল করে স্থায়ী ভবন তৈরী করেন তিনি। কাউরিয়া বন্দরে কাউরিয়া ভুমি অফিসের একটি মজা পুকুর বালু দিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট ভিটি বিক্রী করে অন্ত্যত ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন জনের নামে চান্দিনা ভিটির লীজ নিয়ে অবৈধভাবে স্থায়ী পাকা ভবন তৈরী করে মার্কেট নির্মান করেন। কাউরিয়া বন্দরে পাউবো ও খালের জায়গা দখল করে দোকান নির্মান করেন তিনি। হিজলার বিজ্ঞগুনীজন ধীরেন্দ্রনাথ গুহ’র নিকট থেকে ১৩ একর জমি লিখে নিয়ে রাতের আধাঁরে দেশ ছেড়ে ভারত যেতে বাধ্য করেন। হিজলা বিভিন্ন চরে বেনামে অন্তত ২শ একর জমি বন্দোবস্ত নেন তিনি। কাউরিয়া বন্দরে বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মান করেন আলিশান মার্কেট ও বাড়ি। এছাড়া ঢাকায় নির্মান করেন বিলাশ বহুল বাড়ি ও ক্রয় করেন ফ্লাট। এই ভাবেই দূর্নীতি ও দখল বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন সুলতান মাহমুদ টিপু। কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও নির্বাচনী হলফ নামায় উল্লেখ করেনি তা। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিখুত তদন্তে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত তথ্য।

ভাইদের দুর্নীতি: সুলতান মাহমুদ টিপু ও তার ভাইয়েরা বিভিন্ন ভাবে অবৈধ উপায়ে উপজেলা সদরে সরকারী কক্ষ দখল করে তার ভাই আলতাফ উদ্দিন দিপুকে দিয়ে করেন ঠিকাদারী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বাহিরে কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহন করতে পারেনি। প্রতিটি ঠিকাদারী কাজের জন্য ১০% টাকা দিতে হত দিপুকে। কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা মালিক বনে যান দিপু। উপজেলা পরিষদের মধ্যে সরকারী কক্ষ দখল করে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের অফিস করায় বিব্রত বোধ করেন তখনকার নির্বাহী অফিসার এবং আক্ষেপের সাথে এই কথা প্রকাশ করেন তিনি। ভাই নিপু সিকদার নিয়েছিলেন উপজেলা টেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি। শতাধিক টেম্পুর প্রতিটি টেম্পু থেকে সমিতির সদস্য বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি টেম্পু থেকে দৈনিক একশত টাকা করে নিতে নিপু। বিভিন্ন অজুহাত দেখাতেন নিপু। থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোন ঝামেলা এড়াতে টেম্পু মালিক টাকা তুলে দিতেন নিপুর হাতে। এছাড়া কোন দূর্ঘটনা ঘটলে কৌশলে মালিক কিংবা ড্রাইভারের থেকে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এছাড়া কাউরিয়া বন্দরে অফিস খুলে শালিসি বৈঠকের নামে বিভিন্ন জনের নিকট থেকে জরিমানা করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নেন নিপু সিকদার।

কাউরিয়া মাদ্রাসার সভাপতি থাকায় মাদ্রার নামে অন্তত ১৫টি স্টল থেকে অগ্রিম বাবদ ১০লক্ষ টাকা এবং স্টল গুলোর ভাড়া উত্তোলন করে পকেট ভর্তি করেন তিনি। ছোট ভাই সাহেব সিকদার শুরু করেন চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসা। হিজলায় প্রথম মাদক ইয়াবা আমদানী শুরু করেন সাহেব সিকদার, অন্তঃ জেলা মাদক ব্যবসায় পাইকারী হাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে সাহেব সিকদারের আস্তানা কাউরিয়া বন্দর। মাদক মামলায় বেশ কয়েক মাস জেল হাজতে থাকতে হয় সাহেব সিক্দারকে। কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে যান সাহেব সিকদার। তথা কথিত চাচাতো ভাই রিয়াজ সিকদার ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল সমিতি সভাপতি পদে নিয়ে প্রতিটি মোটর সাইকেল ড্রাইভার থেকে প্রতিদিন নিতেন একশত টাকা। তাকে টাকা না দিলে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালাতে ড্রাইভারকে। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় খুন হতে হয়েছে শ্রীপুর গ্রামের ড্রাইভার শাখাওয়াতকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামী রিয়াজ সিকদার। ছেলে তন্ময় সিকদার চলে যান নেশা ও চাঁদা বাজির জগতে।

এসকল অভিযোগের বিষয় জানতে হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপুর সিকদারের মোবাইলে একাধীকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন