২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশে মাদ্রাসা চালু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০২ অপরাহ্ণ, ০৬ নভেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশে আলাদা কোন মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হিজড়াদের পড়ানোর কোন ব্যবস্থাও এদেশে এখনো গড়ে উঠেনি। তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য শুক্রবার সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ এলাকায় ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার থেকে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীদর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি এটি বিশ্বের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মাদ্রাসাটির মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, এই শিক্ষার্থীদের পড়াতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই মাদ্রাসা নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসায় পড়ার ক্ষেত্রে কোন বয়স সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, অর্থাৎ হিজড়া জনগোষ্ঠীর যে কোন বয়সের মানুষ এই মাদ্রাসায় ভর্তি হতে পারবেন। এখানে পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থীদের কোন খরচ গুণতে হবে না। মরহুম আহমদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মাদ্রাসাটির যাবতীয় কার্যক্রম চলবে।

৪টি বিভাগে মাদ্রাসাটিতে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হবে। পাশাপাশি তাদেরকে কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত করা হবে। নুরানী, নাজেরা হেফজ বিভাগ ও সাওয়ালে হাদিস এ চার বিভাগে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হবে। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে এ মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হবে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হিজড়াদের শেখানোর জন্য বেশ কিছু বুথ রয়েছে। সেখানেও এ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মাদ্রাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, হিজড়া সম্প্রদায় সমাজের কাছে দেশের কাছে বোঝা। এরা যেনো রাষ্ট্রের কাছে বোঝা না হয়ে মানব সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে সেজন্যই এ ধরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে আরো বলেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসাটির শাখা খোলার বিষয়েও চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসেব মতে দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। বাংলাদেশে হিজড়াদের ভোটাধিকার দেয়ার পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা নারী বা পুরুষ নয়, বরং হিজড়া হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়া ভোট দেয়া, এমনকি নির্বাচনেও অংশ নিতে তাদের বাধা নেই। তবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মক্তবে ছেলেমেয়েদের যৌথ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে হিজড়াদের জন্য কোন আলাদা ব্যবস্থা দেখা যায় না।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ যতিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, এধরণের সম্প্রদায়ের জন্য শুধুমাত্র মাদ্রাসায় কেনো গড়ে উঠবে? তাদেরকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সংযুক্ত করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা মানেই আনন্দের কথা। তবে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে শিক্ষা ব্যবস্থায় এ কমিউনিটিকে যুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

হিজড়া, বৃহন্নলা, কিন্নরী- যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বাংলাদেশে পরিবার ও সমাজে তারা নানাভাবে অবহেলিত ও অবাঞ্ছিত। তৃতীয় লিঙ্গের এ সম্প্রদায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নেচে গেয়ে, অথবা নতুন শিশু জন্ম নিলে বখশিশ তুলে জীবিকা চালিয়ে থাকেন।

এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে এ সম্প্রদায়ের সুনিধি সাংবাদিকদের জানান, অধিকাংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। তবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলে তারাও সমাজে নানাভাবে অবদান রাখতে পারবে।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন