২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

হেলপার দিয়ে চলছে ট্রেন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:২০ পূর্বাহ্ণ, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

বিশেষ বার্তা পরিবেশক:: বাংলাদেশ রেলওয়েতে এমনিতেই চালকের সংখ্যা কম। তাই কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে চাইলেই খুব বেশি শাস্তি দেওয়া হয় না তাদের। নইলে যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলই কঠিন হয়ে যাবে। আর এ সুযোগটাই ভালো মতো গ্রহণ করেছেন ট্রেন চালকরা। নিজেরা মাইলেজ ভাতা নিলেও কাজের ক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশই ট্রেন চালানোর ভার ছেড়ে দেন সহকারীর ওপর। ফলে মাঝে মাঝেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চালকের পরিবর্তে সহকারী দিয়ে ট্রেন চালানোর ঘটনাটি ধরা পড়ে গত ১৩ অক্টোবর। ওইদিন লোকোমাস্টার বা চালক ছাড়াই পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে চলে যায় রাজশাহীতে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে এ ঘটনাতেও চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে দায়ী করা হয়েছে। এর আগে গত ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে সংঘটিত দুর্ঘটনায় চালক ও তার সহকারী এবং গার্ডের অবহেলার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলের ৬০৮টি চালকের পদ শূন্য, মূল পদ ১৭৪২টি। এর মধ্যে সহকারী লোকোমাস্টারের (গ্রেড-২) ৬০৭ পদের মধ্যে ৩২৯ জন কর্মরত। এ পদে যোগদানের পর পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধাপ পার হয়ে মূল চালক হতে সময় লাগে ন্যূনতম ৮ বছর। কিন্তু এখন অনেক চালকই তাদের আনকোরা সহকারীদের হাতে ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে অন্যত্র থাকেন। গত ১৩ অক্টোবর পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঈশ্বরদী বাইপাস ঢুকে দুই মিনিট পর সে জায়গা অতিক্রম করে। এ সময়

সেখান থেকে ট্রেনে উঠার পর পাকশীর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিভাগীয় পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা ইঞ্জিনে গিয়ে দেখেন চালক নেই। তখন সহকারী চালক আহসান উদ্দিন তাদের জানান, চালক ডায়রিয়ার কারণে টয়লেটে গেছেন; পরের স্টেশনে ইঞ্জিনে বসবেন। এর পর প্রকৌশলীরা রাজশাহী পর্যন্ত গিয়েও দেখেন চালক নেই। পরে কর্তব্যরত গার্ডকে (আনোয়ার) জিজ্ঞেস করে এবং বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসলে চালক ট্রেনেই ওঠেননি।

সম্প্রতি ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে রেলওয়েতে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওইদিন পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালানোর কথা ছিল চালক আসলাম উদ্দিন খান মিলনের। কিন্তু তিনি অসুস্থ বলে সহকারী চালক আহসান যে দাবি করেছিলেন, তা ভুয়া। কারণ চালক আসলাম উদ্দিনের অসুস্থতার খবর কেউ জানে না। এভাবে ট্রেনকে ঝুঁকির মুখে ফেলার ঘটনায় চালক আসলাম, সহকারী চালক আহসান এবং গার্ড আনোয়ার হোসেনের দোষ খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাই দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চালকদের গাফিলতি বেড়েছে অনেক আগ থেকেই। সম্প্রতি কসবার দুর্ঘটনাও একই কারণে। তবু তেমন শাস্তি পেতে হচ্ছে না তাদের। এর বড় কারণ লোকবল সংকট। তা ছাড়া এসব চালক-কর্মচারীরা শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক লোকোমাস্টার (এলএম) আসলাম উদ্দিন খান ঈশ্বরদী রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) আহসান উদ্দিন শ্রমিক লীগের একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। মূলত রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই এসব চালক-শ্রমিকের বিরুদ্ধে কখনই ব্যবস্থা নিতে পারে না রেল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে রেলের অপারেশনাল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যক্রমের মানও দিন দিন কমছে।

এ বিষয়ে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেন চালকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম আরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন