২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

৭৫ বছর পর পেল যে গ্রামে প্রথম সরকারি চাকরি

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:৩০ অপরাহ্ণ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

৭৫ বছর পর পেল যে গ্রামে প্রথম সরকারি চাকরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ৭৫ বছরে এই গ্রামে কেউ কখনো সরকারি চাকরির মুখ দেখেননি। সেই খরা কাটিয়েই এবার প্রথম সরকারি চাকরি পেয়েছেন গ্রামের এক যুবক। নাম তার রাকেশ কুমার। সে ভারতে বিহার রাজ্যের মুজাফ্ফরপুর জেলার ছোট্ট গ্রাম সোহাগপুরের বাসিন্দা।

এ গ্রামে অন্তত দুই হাজার মানুষের বাস হলেও এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কেউ সরকারি চাকরি পাননি। ভারতের স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরে প্রত্যন্ত এই গ্রামটিতে কেবল রাকেশেরই সরকারি চাকরি হলো৷ ঘুচল অপবাদ। তাই সোহাগপুর গ্রামে এখন খুশির জোয়ার ৷

৩০ বছর বয়সি রাকেশ গ্রামেরই একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। তার পরই তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে গ্রামজুড়ে। রাকেশের চাকরির খবর আসামাত্র সেখানে মিষ্টি বিতরণ, রঙ মাখামাখি শুরু হয়। গত 8 সেপ্টেম্বরে রাকেশ নিয়োগপত্র পেয়েছেন৷ খুব শিগগির মুজাফ্ফরপুরে বারকুরওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করবেন তিনি৷

গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন রাকেশ৷ তার পর তিনি পাশের জেলা দ্বারভাঙায় যান স্নাতকোত্তর করতে ৷ এর পর রাজস্থান থেকে বিএডও করেন ৷ সম্প্রতি তিনি বিহারের ‘টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট’-এ উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এ চাকরি পেলেন ৷

গ্রামের স্থানীয় এক নেতা দেবেন্দ্র চৌধুরী বলেন, সেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকে সোহাগপুর গ্রামে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ একটা স্থায়ী, ভালো বেতনের চাকরির জন্য আশা করে থেকেছেন। কিন্তু সেটি করতে পারার পথ ছিল খুব কমই।

অনেক শিক্ষার্থীই কাছের অনেক বড় বড় নগরীতে পড়াশোনা করতে গেছে। কিন্তু কেউই এত দিন একটা সরকারি চাকরি হাসিল করতে পারেনি। কুমারের সফলতা অবশেষে গ্রামের ওপর থেকে দুর্ভাগ্যের কাল ছায়া সরিয়ে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ এবার আশাবাদী, বাকি তরুণরাও রাকেশ কুমারের পথে হেঁটে সরকারি চাকরি পাবেন ৷ গ্রামের সম্মান বাড়বে বলে জানান দেবেন্দ্র।

ওদিকে চাকরি পাওয়ার আনন্দে রাকেশ বিবিসিকে বলেন, গ্রামের গর্ব হতে পেরে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। তবে এই পথ যে মোটেও সহজ ছিল না সে কথাও খোলাসা করে বলেছেন রাকেশ।

রাকেশের বাবা ছিলেন একজন মুদি দোকানদার। বাবাকে ছোট বয়সেই হারিয়েছিলেন তিনি। এর পরের দীর্ঘ সংগ্রামের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে রাকেশ বলেন, তাকে ২০ মাইল সাইকেল চালিয়ে কাছের মুজাফ্ফরপুরে হাইস্কুলে পড়তে যেতে হতো।

পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য অবসর সময়ে গ্রামের শিশুদের পড়াতেও হতো। এই উপার্জন দিয়েই বই কিনে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এ যুবক। রাকেশ বলেন, বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য আমি সংগ্রাম করেছি। বাবা চাইতেন আমি চিকিৎসক কিংবা শিক্ষক হই। এখন আমি সেই স্বপ্নপূরণ করেছি।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন