২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

৮০০ বছর ধরে একইভাবে প্রস্তুত হচ্ছে দাই কাগজ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৫৩ অপরাহ্ণ, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট দিয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম মানঝো। চীনের ইউনান প্রদেশের এই গ্রামে দাই পেপার মিল থাকার কারণে এটি ‘দাই পেপার’ নামেই বেশি পরিচিত। নতুন দাই ঘর এবং ঐতিহ্যগত কাঠের ঘর উভয়ের উপস্থিতি রয়েছে এ গ্রামে।

পুরো গ্রামের ঘরে ঘরে কাগজ শুকানোর জাল। দাই নারীরা গায়ে পর্দা জড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে গ্রামের ভেতর।

বংশ পরম্পরায় কাগজ তৈরি করছেন এমন একজন ইয়ান কান। তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৮০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানঝো গ্রামে দাই কাগজ তৈরি করছি। পাঁচ বছর বয়স থেকেই দাই নারী-পুরুষ দাই কাগজ নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।’

ইয়ান কানের বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তিনি তার পিতামহদের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভাবে কাগজ তৈরি করতে হয় এবং দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে হয়। সাক্ষাৎকারের দিন ছিল দাইদের গেইট-ক্লোজিং উৎসব। দিবসটি উদযাপনে স্থানীয় দাইরা সবাই খাবার প্রস্তুত করতে ব্যস্ত ছিল। ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পাহাড়ের বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে হাঁটছিলেন ভিক্ষুরা।

ইয়ান কানের মতে, বৌদ্ধধর্মের প্রসারের সঙ্গে কাগজ কলের সম্পর্ক আছে।

দেশটির দক্ষিণের সং রাজবংশের রাজত্বকালে (১১২৭-১২৭৯), কাগজ তৈরির কৌশলটি মানঝো গ্রামে চালু হওয়ার পর, বৌদ্ধ দাই রাজা গ্রামবাসীকে পড়াশুনার জন্য এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ লেখার জন্য কাগজ উৎপাদনের কথা বলেন। কাপড়ের মতো বায়ু চলাচলের ক্ষমতা, ঘর্ষণে ক্ষতি না হওয়া এবং চমৎকার সংরক্ষণ ক্ষমতা ধারণ করায় দাই কাগজ ধীরে ধীরে ভারতীয় অঞ্চলে তাল পাতার জায়গা দখল করে নেয়।

এর মধ্য দিয়ে দাই মানুষের বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যায়।

মানঝো গ্রামের সবুজ রেইনফরেস্ট ঢেকে দিয়েছে পুরো পর্বতকে। ইয়ান কান বলেন, ‘দাই পেপার উৎপাদন এখানে শুরু হয়। কিন্তু পেপার তৈরির চেয়ে আগে প্রয়োজন গাছ রক্ষা। কারণ, দাই কাগজ উৎপাদনের বিষয়টি পরিবেশবান্ধব। এর কাঁচামাল আসে এসব গাছের ছাল থেকে যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য।’

চীনে কাগজ আবিষ্কারের শুরু থেকে দাই কাগজ উৎপাদিত হচ্ছে গত ৮০০ বছর ধরে। এখনো এ কাগজ উৎপাদনে পুরনো উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এখনো গাছের ছাল পানিতে ভেজানো, পানিতে ফুটানো, বাটা, ঢালাই এবং শুকানোর প্রক্রিয়া একইভাবে চলছে।

দাই কাঠের বাড়িতে কাগজ তৈরি কর্মশালায় ইয়ান কান ১১টি প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি অনুভব করতাম যে পেপার তৈরির কাজটি আনন্দেরই। যখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হলাম তখন স্বাভাবিকভাবে এটিই আমার কাজ হয়ে উঠল।

যদিও দাই কাগজ দাই মানুষের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস বহন করে। কিন্তু মাঝে নতুন প্রযুক্তির উৎপাদিত কাগজ বাজারে প্রবেশ শুরু করলে দাই কাগজ সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইয়ান কান দাই কাগজের জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন। এতে উৎপাদন সময় ও খরচ দুইই বাঁচল। এরপর তিনি বিনামূল্যে এ কৌশল গ্রামবাসীকে শেখান।

ইয়ান কান বলেন, ‘আমি আমাদের প্রজন্মের মধ্যে প্রাচীন জ্ঞান সংরক্ষণ করতে চাই।

২০০৯ সালে মানঝো গ্রামবাসীর সঙ্গে একত্রে দাইয়ের ঐতিহ্যগত পেপার মেকিং সমবায় প্রতিষ্ঠা করেন। তাকে ওই সমবায়ের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে গ্রামবাসী।

কাগজ তৈরি প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের কারণে দাই কাগজ এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, চায়ের মোড়ক, কাগজের ছাতা, লণ্ঠন, টুপি, ল্যাম্পশেড এমনকি অস্থায়ী ছাদ তৈরির জন্য এ কাগজ ব্যবহার করছে। একটি ছোট্ট গ্রামে শুরু হয়ে দাই কাগজ এখন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন