২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝালকাঠি জেলার ও জেল সুপারের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩৭ অপরাহ্ণ, ২০ নভেম্বর ২০১৭

আসামী নির্যাতনের বিচার দাবি করে ঝালকাঠি জেলের জেল সুপার শফিউল আলম ও জেলার তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর (রোববার) ঝালকাঠির কাটপট্টি রোড এলাকার বাসিন্দা আসামী শেখ হাসানের স্ত্রী নারগিস খানম এ অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, তার স্বামী শেখ হাসান এক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় ৫/৬ মাস ধরে ঝালকাঠি জেলে রয়েছে। তার স্বামী হাসান কারান্তরীণ হওয়ার পর কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও বন্দি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কারা কর্তৃপক্ষকে নালিশ জানায়। জেলের সকল অনিয়ম ও বন্দি নির্যাতনের সঙ্গে জেল সুপার শফিউল আলম ও জেলার তারিকুল ইসলাম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে হাসান কারাগার পরিদর্শনকালীন জেলা প্রশাসকের নিকট আংশিক অভিযোগ দেয়।

এতে জেল সুপার ও জেলার ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বিভিন্ন সময় বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করেন। জেলার তারিকুল আসামী হাসানকে ভাল জায়গায় কাজ পাশের জন্য জেল সুপারকে দেয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। নিরুপায় হয়ে হাসান অভিযোগকারী স্ত্রীর নিকট হতে নগদ ৫ হাজার টাকা নিয়ে জেলারকে দেয়। কিছুদিন আগে হাসানকে কারা লাইব্রেরীতে কাজ দেন। কারা লাইব্রেরী হতে ইয়াছিন নামক একজন কারারক্ষী দুইটি বই চুরি করে বাহিরে নিয়ে গেলে হাসান জেলা প্রশাসক কারাগার পরিদর্শনে গেলে তাকে অবহিত করেন।

এছাড়া কারাভ্যন্তরে ক্যান্টিনে যে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রী করা হয় তা দুর্নীতির মাধ্যমে দ্বিগুন থেকে তিনগুন দামে বন্দিদের কিনতে বাধ্য করা হয়। যেমন ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারে ১৩০ টাকা হলে কারাকেন্টিনে ৩৫০ টাকায় বিক্রী করা হয়। ৩০ টাকার পান বিক্রী করে ৮০ টাকায়, ৪০ টাকার জুস ৬০ টাকা ইত্যাদি। অফিসে কর্মরত কারারক্ষী সুমন মৃধা ও কারারক্ষী মুনির হোসেনকে দিয়ে বন্দিদের কাছ হতে জোর করে টাকা আদায় করে নেয় জেল সুপার ও জেলার। বিভিন্ন সময় জামিননামায় ভুল না থাকলেও কারারক্ষী মুনির ও সুমন ইচ্ছা করে ভুল বানিয়ে বন্দি ও তার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

জামিনপ্রাপ্ত বন্দিদেরকে ডিবি পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে স্বজনদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। জেলের ভিতরে বন্দিদের খাবার ঠিকমত দেয়া হয় না। প্রতি বন্দির প্রায় ১৫০ গ্রাম মুশুরি ডাল পাওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় মাত্র ৫০ গ্রাম, এভাবে বন্দিদের চাল, তরকারী কোন খাবারই ঠিকমত দেয়া হয় না। এসব পণ্য কারাকেন্টিনে চড়া দামে বিক্রী করা হয়। কেন্টিনে অত্যাধিক দাম বিধায় অনেক আসামীই কিনতে পারে না।এতে বেশিরভাগ সময়ই বন্দিদের অর্ধাহারে থাকতে হয়। এসব অনিয়ম সম্পর্কে জেল সুপারকে বললে তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চার দেয়ালের মধ্যে বিভিন্ন অজুহাত তৈরী করে বন্দিদেরকে শাস্তি প্রদান করে থাকেন। আগে যেসব বন্দিরা প্রতিবাদ করেছে তাদের প্রত্যেককে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

গত জুন মাসে কয়েদি আসামী ছগির হাওলাদারকে (বর্তমানে জামিনে) জেল সুপার ও জেলারের উপস্থিতিতে নির্মমভাবে পিটানো হয়। এ বিষয়ে ছগিরের স্ত্রী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। হাজতি আসামী সৈয়দ রিপনকে ও জেলা প্রশাসকের নিকট নালিশ করার কারনে শাস্তি দেয়া হয়। কিছুদিন পূর্বে আসামী জাকির হোসেনকে জেল সুপার ও জেলারের নির্দেশে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। পরে তাকে জেলের বাহিরে মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

কয়েকদিন আগে নারগিসের স্বামীকে জেল সুপার বলেন, জেল খানায় থাকতে হইলে ২/১ দিনের মধ্যেই ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। অন্যথায় সুস্থ্য রাখা হবে না। সেলে আটকিয়ে রাখার হুমকি দেয়া হয়। এর কিছুদিন আগেও নারগিসের স্বামীকে টাকার জন্য হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল জেল সুপার ও জেলার। তার স্বামী জেলখানায় থাকায় দরখাস্ত করতে সুযোগ পায় না। এজন্য স্বামীর সাথে সাক্ষাত করে সবকিছু শুনে প্রতিকার চেয়ে নারগিস আইনানুগ ব্যবস্থা দাবি করে এ অভিযোগ দাখিল করে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে আরো অনেক দুর্নীতি, অনিয়ম ও বন্দি নির্যাতনের ঘটনা পাওয়া যাবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে জেল সুপার ও জেলার আসামী হাসানের বড় ধরণের ক্ষতি করার আশংকা প্রকাশ করা হয়। নারগিস দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগপত্রে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার স্বামীসহ সকল বন্দিকে জেল সুপার ও জেলার এর নির্মমতা হতে রক্ষা করার অনুরোধ করেন।

আবেদনের অনুলিপি কারা অধিদপ্তরের কারা মহাপরিদর্শক, বরিশাল বিভাগের কারা উপমহা পরিদর্শক, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। এ ধরনের অভিযোগ গত ৯ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পৃথকভাবে দেয়া হয়। অভিযোগকারী নারগিস বলেন, ডাকযোগে বরিশালের দুদক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ২০ নভেম্বর বিকেলে দুদক কার্যালয়ে অভিযোগপত্র পৌছেছে বলে ডাক বিভাগের মাধ্যমে জানতে পারেন তিনি।

অপরদিকে জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগের ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলার জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, অভিযোগপত্র পাওয়া গেছে। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন