২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

জিয়া অরফানেজ মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৩ অপরাহ্ণ, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলার রায়ের তারিখ আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।

এদিন একই আদালতে বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন। তবে তিনি আসার আগেই ১১টা ৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন।

শুরুতে আইনজীবী আহসান উল্লাহ আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। যুক্তি উপস্থাপন শুরুর আগে তিনি বলেন, এই মামলায় ম্যাডাম খালেদা জিয়াও আমাকে ওকালতনামা দিয়েছেন যাতে তার প্রসঙ্গ আসলেও কথা বলতে পারি।

এ সময় বিচারক বলেন, আপনাকে আজ যুক্তিতর্ক শেষ করতে হবে। আপনি আজ লাঞ্চ পর্যন্ত সময় পাবেন। এরপর পিপি সাহেব বলবেন।

জবাবে আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলেন, বিনা দোষে জেল খাটার চেয়ে যাতে জেল খাটতে না হয় তা বোঝানোর জন্যই আমি একটু সময় নিয়েছি। তবে বিজ্ঞ আদালত যা বলবেন তাই হবে।

এই আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে বলেন, মাননীয় আদালত, আমি এই রকম কেস এই উপমহাদেশে খুঁজে একটিও পাইনি। তবে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ কোন ক্ষেত্রে হয় আর কোন ক্ষেত্রে হয় না, আমি এ সংক্রান্ত কিছু নজির বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করব।

এরপর তিনি বাংলাদেশ হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ এবং পাকিস্তান ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।

এরপর তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের কেস ট্রাস্ট সৃষ্টির পর থেকে। যদি তাই হয়, তবে খালেদা জিয়া এবং কামাল উদ্দিন সিদ্দিকির কোনো ভূমিকাই এখানে নেই। শরফুদ্দিন আহমেদের ট্রাস্টের কাছে জমি বিক্রেতা এবং সালিমুল হক কামাল ব্যাংকে টাকা রেখেছেন মাত্র। তাদের কোনো দায়বদ্ধতাই আসে না। আর টাকাগুলো যেহেতু অপচয় হয়নি বরং সুদে-আসলে এখন অনেক গুন হয়েছে, তাই কোনো আসামিরই এখানে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।

তিনি বলেন, এই মামলায় শুধু পাতার খস খস শব্দই আছে। কোন বাঘ-বাগডাসার অবস্থান নেই। তাই বেগম খালেদা জিয়া, শরফুদ্দিন আহমেদ ও সালিমুল হকের বেকসুর খালাস দাবি করছি।

এরপর বেলা ১টার দিকে বিচারক ৩০ মিনিটের বিরতিতে যান। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে তিনি আবার এজলাসে ওঠেন। ওই সময় আইনজীবী মিজানুর রহমান আসামি শরফুদ্দিন আহম্মেদ এবং সালিমুল হক কামালের পক্ষে আইনগত পয়েন্টের ওপর ১ ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপন করে একইভাবে তাদের খালাস দাবি করেন।

এরপর দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিপক্ষের যুক্তিখণ্ডনের বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটিতে গত ১৯ ডিসেম্বর আমরা মাত্র ২ ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপন করি। আর আসামিপক্ষ ১৬টি ধার্য তারিখে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তারা মামলাটি কগনিজেন্সে নেওয়ার, চার্জের বিরুদ্ধে, নোটিসের বিরুদ্ধে ও পুনঃতদন্তের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমরা ৩২ জন সাক্ষী দিয়ে এবং সঙ্গে ডকুমেন্ট দ্বারা আদালতে সকল আসামির বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের বিষয়ে উচ্চ আদালতে দুটি সিদ্ধান্ত দিচ্ছি। তারা বলেছেন, মামলার ডকুমেন্ট জালিয়াতি হয়েছে। আসলে কারা ডকুমেন্ট জালিয়াতি করেছে তা আমরা বিজ্ঞ আদালতের রায়ে পাব।

মোশাররফ হোসেন কাজল ফ্যাক্টের ওপর কথা বলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান বাধা দেন।

ওই সময় পিপি কাজল বলেন, আঙুল উঁচিয়ে কথা বলবেন না।

এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিয়ম হয়।

একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, পিপি সাহেব সিনিয়র-জুনিয়র বোঝেন না। আর আপনার (বিচারক) রায়ে কী আসবে তা উনি কীভাবে বলে দেন?

এরপর রেজ্জাক খান বলেন, আমরা ল পয়েন্টে কিছু বলব। তবে আজ তো সময় শেষ।

ওই সময় বিচারক বলেন, যা বলবার আজই বলুন।

এরপর রেজ্জাক খান বলেন, যদি জোর করেন তো বলতেই হবে।

এরপর তিনি আসামিপক্ষে উপস্থাপিত অধিকাংশ যুক্তি প্রসিকিউশন খণ্ডন করতে পারেন নাই বলে দাবি করেন।

এরপর উভয় পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ায় বিচারক আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি অরফানেজ মামলায় রায় এবং ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি চ্যারিটেবল মামলায় যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেন।

পরে আবদুর রেজ্জাক খান সাংবাদিকদের বলেন, যে উৎস থেকে টাকা এসেছে তা প্রসিকিউশন সাক্ষ্য দ্বারা প্রামাণ করতে পারেনি। এজাহারের সম্পূর্ণ বিপরীতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এজাহারে ঘটনাস্থল প্রাইম ব্যাংক। আর চার্জশিটে ঘটনাস্থল সোনালী ব্যাংক। জোড়াতালি দিয়ে মামলা চালানো হয়েছে। এটা একটা ‘সারবত্তাহীন’ মামলা। এ মামলায় খালেদা জিয়া খালাস পাবেন বলে আশা করছি।

যুক্তিতর্ক শেষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত আসামিপক্ষ অসংখ্যবার উচ্চ আদালতে গিয়েছেন মামলাটি বন্ধ করার জন্য। আমরা ৩২ জন সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করেছি যে, খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ তার দুই এতিমের মাধ্যমে অর্থাৎ আরাফাত রহমান কোনো (মৃত) ও তারেক রহমানকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই এতিমগণ তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যয় করেছেন এবং নিজের স্বার্থে ব্যাংকে রেখেছেন। সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রার্থনা করেছি। আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আশা করছি, রায়ে এর প্রতিফলন ঘটবে।

গত ১৬ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর গতকাল বুধবার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আরেক আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।

গত ২০, ২১, ২৬, ২৭, ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০ ও ১১ জানুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা।

এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন