২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিক্ষকরা আসেন না ক্লাসও হয় না

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩৯ অপরাহ্ণ, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খেয়ালখুশিমতো স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অন্য শিক্ষকেরাও ক্লাস নেন মর্জিমতো। শিক্ষার্থীরা যখন খুশি আসে, আবার চলেও যায়। ভাঙাচোরা টিনশেড ঘরে চলে পাঠদান। নেই অফিসকক্ষ ও শৌচাগার। এই অবস্থা ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পশ্চিম সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

জানা গেছে, কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ে শিক্ষককের সংখ্যা চারজন। তবে তারা কেউ নিয়মিত স্কুলে আসেন না। কেউ কেউ রেখেছেন বদলি বা ভাড়াটে শিক্ষক। তারাও থাকেন অনুপস্থিত। এ কারণে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা আর আড্ডা মেরে বাড়ি যায়। স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১২টায়। ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। অনেকেই পড়ছে ঝরে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের অভিযোগ তাদের জানা নেই। তবে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন তারা।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় সরেজমিনে বিদ্যালয়টি  গিয়ে দেখা গেছে, টিনশেড ঘরের দক্ষিণ পাশের চালা ভেঙে গেছে। কক্ষগুলোতে তিন-চারটি করে বেঞ্চ। পঞ্চম শ্রেণিতে ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে কেউ নেই, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৫ জনসহ মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী এসেছে। যদিও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ জন। ওই সময় বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের উপস্থিতি শতভাগ দেখানো হলেও শিক্ষকরা কর্মস্থলে না গিয়ে মাস শেষে বেতন নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিকের কোন কার্যক্রম নেই। শিশুদের শিক্ষা উপকরণগুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি আক্তারের ছেলে ভেঙে ফেলেছেন বলে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা জানান।

স্থানীয় যুবক মহসিন, মাসুদ রানা ও সুজনের কাছে স্কুলের ব্যাপারে চাওয়া জানতে হলে তারা বিরক্ত হয়ে জানান, স্কুল চলছে, শিক্ষকও আছেন। কিন্তু নিয়মিত পাঠদান করা হয় না। দুপুর ২টায় স্কুল ছুটি দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি আক্তার বলেন, শিক্ষা উপকরণগুলো ভেঙে ফেলেছে, তাতে কি। প্রতি বছর নতুন উপকরণ কেনা হয়। তবে স্কুলে নিয়মিত না আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ফোন সংযোগটি কেটে দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান ফোরকান জানান, ম্যানেজিং শিক্ষকরা সঠিক সময়ে আসেন না। তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

এ ব্যাপারে সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা ঊর্মি বলেন, ‘আমাকে ওই ক্লাস্টারে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই স্কুলটি পরিদর্শন না করে বিস্তারিত বলতে পারবো না।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এভাবে একটি স্কুল চলার কথা নয়। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে এ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন