২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিক্ষকের বেতের লাঠি লক্ষ্মীর কাঠি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

জীবনটা বই পড়া প্রবন্ধের শিক্ষা থেকে পুরোটাই আলাদা। সাহিত্য  মানুষ জীবন রস আস্বাদনে স্বেচ্ছায় পরলেও ইতিহাস, বিজ্ঞান বা ব্যবসার তত্ব আমরা স্বেচ্ছায় গলাঃধকরণ করি না। কখনো কখনো প্রেমলীলার রস আস্বাদনেও আমরা উপন্যাস পড়ি তা নিছক উরু উরু মনকে তৃপ্তির স্বাদ দেয়া । আমাকে পড়তে হবে, শিখতে হবে তা ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত খুব কম সাদাসিদে বালকই বুঝতে পারে। দুরন্তপনায় পড়ালেখাটা যেন  তাদের কাছে ভীনগ্রহের একটা বস্তু যা  উচ্ছল ছুটে চলাকে পায়ে বেড়ি পড়ায়।

অপরিপক্ক খুব কম শিক্ষার্থীই বোঝে না, তাকে পড়তে হবে জাতি গঠনের জন্য। সে স্কুলে যায় অতি দুরন্তদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফর্মালিটি যেন অসহ্য অনিয়ম মনে হয়। আর সহজে তা সে মানতেই চায় না। আমরা স্কুল পালিয়েছি অনেকেই কিন্তু রবিন্দ্রনাথ কিন্তু দুজন না। ৮-১৪ বছরের খুব কম বালকই মানতে চায় প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন দিতে হবে। যা তার জন্য মঙ্গলকর। শিক্ষক তার কর্ম আর মহান পেশার তাগিদে পাঠদান করে পরবর্তী দিন সে পাঠ আদায় করবে সেটাই তো প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম। কিন্তু শিক্ষক ক্লাসে গিলিয়ে দিলেও বাসায় অধ্যয়ন না করে তা ধরে রাখতে পারে এমন বিদ্যাসাগর খুব বিরল। আমরা যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করি সেখানে নিযুক্ত শিক্ষকের সাথে আমাদের পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিক শত্রুতা  নেই। তারা আমাদের কাছে শত্রু বলে বিবেচনা হয় ঠিক যখন তারা পড়া আদায় করতে আসে। যখন তারা শাসন করে। এই শাসনের একটা অংশ ছিল বেত্রাঘাত।

মনে আছে যেই সব বিষয়ে মাধ্যমিকে খুব কাঁচা ছিলাম তাতে সফলতা এসেছে লক্ষ্মীকান্ত বেতের ভয়ে। গণিত তার মধ্যে অন্যতম। অমরা বানরকে কিন্তু আদর করলে সে বোঝে না সে ভয় পায় লাঠিকে। আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত দুষ্টমিতে বানরকেও যে হাড় মানাই। কিন্তু বৈদিশিক শিক্ষা কালচারে শিক্ষা দিতে গিয়ে আমরা যেন কাকের পিছনে পেখম এটে দিয়েছি। ভুলেই গেছি এদেশ এখনও বিদেশ হয়নি। উন্নত বিশ্ব যেমন, আমেরিকা, জাপান ও অন্যান্য দেশের মত শিক্ষার কল্পনা কি এর জন্য দায়ী? উদাহরণস্বরূপ উন্নত বিশ্বে ঘরেই কুটির শিল্প হিসেবে তৈরি করে আমাদের ব্যবহৃত বিলাসী ইলেকট্রনিক সামগ্রী। ঠিক যার গঠন প্রণালী আমরা বই পরে মুখস্থ করি। যেহেতু মুখস্থই করি তবে বই পড়া প্রবন্ধ কেন অনুসরণ করি?

এই মুখস্থই যদি করতে হয় তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেত বন্ধের মানে কি! আগে শিক্ষক দেখলে শিক্ষার্থী সম্মান, শ্রদ্ধা, ভীতচিত্তে অবনত থাকতো। এখন হচ্ছে তার ঠিক উল্টো। এখন শিক্ষক ভয়ে শাসন তো দূরে থাক ভয়ে উপদেশ বা কটু কথাও বলে না নিজের সম্মান ধরে রাখতে। শিক্ষিত করার জন্য শিখাতে হবে কিন্তু ছাত্র অমনোযোগী ক্লাসে। তাকে মনযোগী করার বড়ি তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ দেয় না। স্কুলে অডিট হয় শিক্ষার্থী দাড় করিয়ে মহান অডিটর মৌখিক প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেন। শিক্ষার্থী না পারলে শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন মহাশয়। যাহাই হোক কর্তা বলে কেষ্টা বেটাই চোর।

আমরা  ক্রিয়েশনও খুজি আবার রেজাল্টও খুজি। যদি ক্রিয়েশন খুজি তবে রেজাল্ট সিস্টেম বন্ধ করি,প্রথম, দ্বিতীয় না  খুজি। যদি রেজাল্ট খুজি তবে ক্রিয়েশন স্বপ্ন বন্ধ করি। আচ্ছা অভিভাবক আপনার সন্তানকে শিক্ষক শাসন করলো বলে আপনার জ্বলে উঠল, আপনি যদি বাসায় একটু সতর্ক হতেন তবে আপনার সন্তানকে কিন্তু শিক্ষকের শাসন করতে হতো না। শিক্ষক যখন শাসন করলে মহাভারত অশুদ্ধি হয়, তবে আমরা সন্তানকে স্কুলের বারান্দায় না পাঠালেই তো হয়। চোখের সামনেই অনেক অভিভাবকদের দেখেছি পিইসি পরিক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হন্য হয়ে খুজতে। তবে সেই সন্তান স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবে! গাইড বই চাই না কিন্তু এমন কোন অভিভাবক আছেন যার সন্তানকে গাইড পড়ান না? আমদের শিক্ষাব্যবস্থার মোড়ক বদলেছে কিন্তু পণ্য ঠিক আগেরটাই। দূর্গাকে বাদ দিয়া স্বরস্বতীর  আশির্বাদ যেমন ভিত্তিহীন তেমনি শিক্ষকের শাসন ছাড়া পরিপক্ক শিক্ষা তথা স্বশিক্ষা কল্পনা করা কঠিন।

@ লেখক পরিচিতি – সাবেক শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন