২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ক্রসফায়ার : আমাদের আবেগী সমর্থন বনাম নিরীহ জনগণের নিরাপত্তা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩৯ অপরাহ্ণ, ০৩ জুলাই ২০১৯

নুসরাত হত্যা মামলায় ক্রসফায়ার অথবা অপরাধীদের গুলি করে হত্যা করা হয়নি কিন্তু তার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার হচ্ছে তা নিয়ে কারো আপত্তি আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে অপরাধীরা শাস্তি পাবে এটা নিশ্চিত। এমনকি যারা এর মদদ দিয়েছে তাদের নামও মূল অপরাধীদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং তারা আইনের আওতায় এসেছে। মূল অপরাধীদের ক্রসফায়ার দেয়া হলে মদদদাতাদের নাম বেরিয়ে আসতো কিনা বা জাতি জানতে পারতো কিনা জানা নেই। রিফাত হত্যা মামলার আসামীদের আটকে রেখে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হলে তারা জেলখানায় বসে মৃত্যুর প্রহর গুনতো এবং ফাঁসিতে মৃত্যু হতো তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারবিভাগ বা সরকারের উপর কারো আস্থা কমতো বলে মনে হয় না।

তবে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের ফাঁসি দেয়ার সাংবিধানিক ও আইনগত সূযোগ থাকা সত্বেও ক্রসফায়ারে হত্যায় যারা সন্তুষ্ট এবং সমর্থন করলাম তারা কী ভুলে গেছি যে আমাদের এই সমর্থনের সূযোগকে কাজে লাগিয়ে শুধু আর্থিক লোভে এবং ব্যক্তিস্বার্থে নারায়ণগঞ্জে ৭ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করার সাহস পেয়েছে কিংবা কক্সবাজার স্ত্রী কন্যাকে ফোনে লাইনে রেখে গুলি করে হত্যা, নিরীহ লিমনকে হাতে বন্দুক আছে বলে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে গুলি করে পঙ্গু করার মতো ঘটনা ঘটেছে???এ জাতীয় হয়তো আরো ঘটনা আছে যার কিছু আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারি আবার অনেকগুলো হয়তো আমাদের জানার সুযোগ হয় না। তাই কখনো দেখা যায়, ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে আমাদের অনেকের আবেগী স্ট্যাটাস এবং সময়ের পরিবর্তনে  তার উল্টোটা অর্থাৎ ক্রসফায়ারকে সমর্থন করছি। তবে কোন দুর্ধর্ষ অপরাধী যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইনানুগ কর্মকাণ্ড বা জনশৃঙ্খলা বা জানমাল নিরাপদ রাখার কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করে তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আত্মরক্ষায় কোন ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই আইনানুগ এবং সমর্থনযোগ্য।

যেকোন কিছু সমর্থন বা প্রতিবাদের আগে আমাদের মাথায় রাখা উচিৎ এদেশের সমাজে নয়ন বন্ডের মতো সন্ত্রাসীরা যেমন আছে….আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে তারেক সাঈদের মতো সেভেন মার্ডারারও আছে। অর্থাৎ নয়ন বন্ডদের মত কুলাঙ্গার অপরাধীদের নির্মূলের জন্য বিচারের মাধ্যমে ফাসির পরিবর্তে যদি ক্রসফায়ারে বিনাবিচারে হত্যাকে সমর্থন করি তাহলে সেই সমর্থনের সূযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য তারেক সাঈদরা আইনের সেবক হয়েও রাষ্ট্র বা সমাজের সমর্থন হিসেবে চালিয়ে দিতে সেভেন মার্ডারের মত অপরাধ করতে সাহস পায় বা মেকানিজম করে। দুটো অপরাধেরই ভিকটিম এই সমাজ এবং নিরীহ জনগণ।

এক অপরাধীকে এক ধরনের অপরাধের জন্য ক্রসফায়ার দিলে ব্যক্তিগত স্বার্থে তা অপব্যবহার করে আরেকটা অপরাধ সৃষ্টি করলে সমাজতো অপরাধের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাই দুই প্রজাতির অপরাধীদের নোংরা থাবা থেকে নিরীহ জনগণ এবং দেশকে রক্ষা করার জন্য এ জাতীয় ক্রসফায়ার নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর ফাঁসি দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগকে সমন্বিত এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ।

লেখক : মো. কাওসার হোসাইন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আইনগ্রন্থ প্রণেতা।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন