১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ভোলায় কৃষকের হাসি কেড়ে নিচ্ছে দালালরা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, ২৫ মার্চ ২০২৩

ভোলায় কৃষকের হাসি কেড়ে নিচ্ছে দালালরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ভোলার মাটি আর জলবায়ু অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে সাড়ে ৯ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন জেলার তরমুজ চাষিরা। কিন্তু বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। তাদের সেই হাসি কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয় কতিপয় দালাল নামের প্রভাবশালী।

যাদের প্রতিটি তরমুজের বিপরীতে দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ১০ টাকা। দালালদের যন্ত্রণায় সরাসরি বেপারিদের কাছে বিক্রি কিংবা মোকামেও নিজেদের ফলানো ফসল পাঠাতে পারছে না কৃষকরা। দ্বীপজেলা ভোলা বেশ উপযোগী তরমুজ চাষের জন্য। গত বছরও গ্রীষ্মের সুস্বাদু এই ফলটি চাষ করে বেশ ভালো ফলন আর দাম পেয়েছে কৃষকরা।

লাভবান হয়েছে বলেই চলতি বছরে আরও বেশি জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছে তারা। পুরো জেলাতে গত বছরের চেয়ে ৭ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে এবার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বেশি।

হেক্টর প্রতি তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ টন করে। আর মোট তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭৬ টন, যা পূরণ হয়েছে ইতোমধ্যে। এদিকে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি থাকার কথা থাকলেও দেখতে হচ্ছে তাদের মলিন মুখ। চোখে-মুখে তাদের চরম ক্ষোভ আর হতাশা।

একটি তরমুজের পেছনে ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ থাকলেও মাঠে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের সেখান থেকে দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ১০ টাকা করে। নিজের ফসল নিজে বিক্রি কিংবা গাড়িতে তুলে দিতে পারছে না কৃষকরা।

সব দালালদের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে প্রতারণার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার অসহায় কৃষকরা। জেলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের প্রত্যন্ত অঞ্চল চরকলমী ইউনিয়নের একাধিক তরমুজের ক্ষেতে গেলেও একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন তরমুজ চাষিরা।

মো. রফিকুল ইসলাম, মো. বেল্লাল হোসেন ও মো. শরীফসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘রোদে পুড়ে চাষাবাদ করি। ব্যাংক আর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফসলাদি ফলাই দুটো আয় করব বলে।অথচ স্থানীয় নেতা আর প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা দালালি করে তাদের জন্য সেটাও পারছি না। আমার ফল আমি ক্ষেত থেকে কেটে মাথায় করে ট্রাকে পৌঁছে দেব, দু-চার টাকা লাভ হবে। সেটাও দালালদের দিতে হবে। আমার তরমুজ আমি দাম দিতে পারি না, এরা এসে দাম ধরে বিক্রি করছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর জুলুম করছে এই নেতাফেতারা। চাষাবাদ করি আমরা আর এরা এসে ফাও টাকা নিয়ে যাবে।’ এদিকে তরমুজের ক্ষেতে কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবেদককে কথা বলতে দেখে ছুটে আসেন স্থানীয় দালাল বলে পরিচিত চর কলমী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডর সাবেক মেম্বার মো. আবুল বাশার বাচ্চু এবং একই ইউনিয়নের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ সময় কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি তরমুজ কিনছে না বেপারিরা। তারা কৃষকদের বিশ^াস করছে না বলেই আমরা সহযোগিতা করছি, তাতে আমরাও একটু লাভবান হচ্ছি।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন