২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঝালকাঠি হাসপাতালে এক্সরে-প্যাথলজি বন্ধ: চরম দুর্ভোগে রোগীরা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ০২ এপ্রিল ২০২৩

ঝালকাঠি হাসপাতালে এক্সরে-প্যাথলজি বন্ধ: চরম দুর্ভোগে রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঝালকাঠির ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ওষুধ, প্যাথলজি ও এক্সরে বিভাগের কেমিকেল সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। সরবরাহের টেন্ডার হলেও অনুমোদন মিলছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তাই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ না দেওয়ায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।

এতে প্রায় ৩মাস ধরে এক্সরে ও প্যাথলজি বিভাগের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর এই হাসপাতালে ওষুধসহ প্যাথলজি, এক্সরে বিভাগের সার্বিক সামগ্রীর জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাকি ৬৫ শতাংশ টাকার ওষুধ সামগ্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়।

ঝালকাঠি অংশের টেন্ডার হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না । প্যাথলজি বিভাগের ৪০টি আইটেমের বিপরীতে প্রতিদিন রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। কিন্তু চলতি মাসের ১১ তারিখ থেকেই উপাদান সংকটে অধিকাংশ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।

এরমধ্যে সিরাম ক্রিয়েটিনিন, সিরাম ইউরিক এসিড, ব্লাড সুগার, এসজিবিটি, ব্লাড গ্রুপিং, আরএ টেস্ট, এইচবিএসএজি উল্লেযোগ্য পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখায় চরম বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা। হাসপাতালে আসা রোগীদের হয়রানির পাশাপাশি বাইরের বেসরকারি ল্যাব থেকে দুই তিন গুণ বেশি টাকা খরচ করে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।

এ খরচ অনেকের সাধ্যের বাইরে থাকায় তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন না। চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরছেন তারা। হাসপাতালে হাঁটুর এক্সরে করাতে আসা পোনাবালিয়া গ্রামের নাজিউর রহমান বলেন, জানতাম না এক্সরে বন্ধ আছে। আউটডোরে চিকিৎসক এক্সরে করানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু এখানে না থাকায় ৪শ’ টাকার এক্সরে বাহিরের ল্যাব থেকে ৯০০ টাকায় করাতে হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কেওড়া ইউনিয়নের ফুলবানু, নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের মানিক বিশ্বাস বেসরকারি ডায়াগোনস্টিক থেকে ব্লাড, ইউরিন, এসবিএসএজি এবং এজিপিটি পরীক্ষা করিয়ে আউটডোরে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছেন।

তারা জানান, আমাদের এসব পরীক্ষা করাতে বাইরে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা হাসপাতাল থেকে করলে ১৭০০ টাকায় পারতাম। হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষ বন্ধের বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত জীবন বড়াল বলেন, শুনেছি ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করতে অনুমোদন পাচ্ছে না। তাই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বেশ কিছুদিন বন্ধ। ঈদের পরেই অনুমোদন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এক্সরে বিভাগের দায়িত্বে থাকা দিলীপ রায় জানান, চলতি বছরের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লিম সরবরাহ না থাকায় আমার এখানে কোন কাজ হচ্ছে না। রোগীরা এসে ফেরৎ গেলেও কিছুই করার নেই।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার সোহাগ কৃষ্ণ পিপলাই জানান, গত ৬ মাস আগে টেন্ডার হলেও এখনো কার্যাদেশ পাইনি। তাই আমি এ হাসপতালের ওষুধসহ অন্য মালামাল সরবরাহ করতে পারছি না।

শুনেছি কার্যাদেশ দেওয়ার আগে নাকি প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হয়। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের ফাইল পরে থাকায় আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ১১ মার্চ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর কার্যাদেশ না দেওয়ায় এ জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন এই টেন্ডারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখে এসেছি। কিন্তু তারপরেও তত্ত্বাবধায়ক কেন কার্যাদেশ দিচ্ছেন না সেটা আমার বোধগম্য নয়। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ জানান, দু-একদিনের মধ্যেই কার্যাদেশ দেওয়া হবে। ওষুধ আসতে কিছুদিন সময় লাগবে।

11 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন