১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন রাঙ্গাবালীর জেলেরা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৩৯ অপরাহ্ণ, ০১ জুন ২০২৩

নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন রাঙ্গাবালীর জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সমুদ্রই উপকূলীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রধান উপায়। সাগর তাদের যেমন জীবিকার উপায়, তেমনি এর রুদ্ররূপ তছনছ করে দেয় তাদের জীবন ও সম্পদ। সাগর থেকে মাছ শিকার, মাছ বোঝাই ট্রলারের সৈকতে ভেড়ানো, সাগরে যাওয়ার আয়োজনে সারি সারি ট্রলার প্রস্তুত করা, সাগর থেকে ধরা মাছ এনে বাছাই করা এবং শুটকি তৈরিসহ এমন হাজারো কর্মতৎপরতায় ব্যস্ত থাকেন উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা। সেই সাগরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞায় সেখানকার মানুষ হয়ে পড়েছেন কর্মহীন।

গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে রাঙ্গাবালীর জেলেপল্লী। অলস সময় পার করছেন তারা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন মৎস্যজীবীসহ শুঁটকি পল্লীর কর্মরত শ্রমিকরা। হালনাগাদ তালিকা না থাকায় সরকারঘোষিত প্রণোদণা পাচ্ছেন না অধিকাংশ জেলে।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণেও দাবি করেছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় শুঁটকি পল্লীতে সুনসান নীরবতা। অলস বসে আছে সারি সারি মাছ ধরার ট্রলার। মণকে মণ টাইগার চিংড়ি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাছাই করে মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নেই সেই চিরচেনা ব্যস্ততা।

নেই সাগর থেকে মাছ ধরার ট্রলার তীরে ভেড়ার হাকডাক। মাছ ধরার ট্রলারে রসদ নিয়েও তীর থেকে পাড়ি জমাচ্ছেন না সমুদ্রে। অলস সময় পার করছেন জেলে পল্লীর মানুষ। মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সামদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০-এর ধারা ৩-এর উপধারা ২-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধ।

সরকারি এ নির্দেশনা কার্যকর করতে এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এ সময়ে জেলেদের প্রণোদনার জন্য জনপ্রতি ৮৬ কেজি চাল বরাদ্দ রয়েছে। যা জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিতরণের কথা রয়েছে।

জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১২ হাজার ৮২০ জন। এছাড়া আরো প্রায় ৫ হাজার সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন অনিবন্ধিত। সমুদ্র-তীরবর্তী বিভিন্ন ট্রলার ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা ৬৫ দিনের অবরোধে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় উপকূলের বিভিন্ন স্থানে ট্রলার নোঙর করে রাখা আছে।

আর জাল মেরামত করেছেন জেলেরা। অন্যদিকে সম্প্রতি ঘর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কিছু জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরেই যেতে পারে নাই। চরমোন্তাজের জেলে মন্নান গাজী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আমরা মেনে চলি। তবে এ সময়টা মাছ ধরার মৌসুম। আর সেই সময়েই নিষেধাজ্ঞা থাকে।

যারা প্রকৃত জেলে তারা চাল পান না। এ সময়ে জেলেদের জন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও, তা প্রকৃত জেলের ভাগ্যে জুটছে না। অন্যদিকে বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার। এছাড়া ভরা মৌসুমে জেলেদের মৎস্য আহরণের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিবন্ধিত জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। অনিবন্ধিত জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ অ্যাকোয়াকালচার বিভাগীয় চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ৬৫ দিন সাগরের জেলেদের অবরোধ মাছ রক্ষায় এটা দরকার।তবে একই বঙ্গোপসাগরে ভারতের জেলেদের ১৪ জুনে অবরোধে শেষ। আমাদের জেলেদের ২৩ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষমান। সেক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশে একই সময়ে অবরোধ হওয়া দরকার।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন