২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝালকাঠির এমপি হারুনের ওপর সংক্ষুব্ধ আ’লীগ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক, ঝালকাঠি:: ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নির্বাচনী এলাকায় সফর নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ সাত মাস পরে তিনি এলাকায় এসে উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রের কারণ দর্শানো নোটিশপ্রাপ্ত দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ রক্ষা না করা এবং বৈঠকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ উঠেছে এমপির বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাঁর কোন অনুষ্ঠানে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি এমপির সঙ্গে কোন নেতাকর্মীর যোগাযোগ না রাখারও ঘোষণা দেন তারা।

দলীয় সূত্র জানায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। রাজাপুর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান মনির ও কাঁঠালিয়া থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমাদুল হক মনিরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু এমপি বজুলল হক হারুন দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তাঁর ব্যক্তিগত সমর্থিত প্রার্থী (দলের বিদ্রোহী) রাজাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিলন মাহমুদ বাচ্চু ও কাঁঠালিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদারের পক্ষে মাঠে নামেন। তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ করেন। এখবর জানতে পেরে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এমপির ওপর ক্ষুব্ধ হয়। নেতাকর্মীরা এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে লিখিতভাবে চিঠি দেন। বজলুল হক হারুন ওই সময় এলাকা থেকে ঢাকায় চলে যান। এর পর তিনি আর নির্বাচনী এলাকায় আসেননি। সেই থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় নেতাকর্মীরা এমপিরও ওপর আরো ক্ষুব্ধ হয়। দীর্ঘ সাত মাস পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজাপুরে আসেন এমপি হারুন। সন্ধ্যার পরে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাসকাঠি গ্রামে নিজের বাড়িতে বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাননি। সেই বৈঠকে অংশ নেয় উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী (দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানো নোটিশপ্রাপ্ত) মিলন মাহমুদ বাচ্চু ও তাঁর সমর্থকরা। ওই বৈঠকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা এমপি হারুনের এসব কর্মকান্ডে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। এমপিকে অবাঞ্চিত হিসেবে দেখছেন তারা। তাই এমপির সকল অনুষ্ঠান বর্জন ও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করার জন্য অনুরোধ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খাইরুল আলম সরফরাজ, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস, সদস্য ও রাজাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান মনির, আফরোজা আক্তার লাইজু ও জিয়া হায়দার লিটনের সাক্ষর করা নেতাকর্মীদের কাছে পাঠানো একটি চিঠি এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন। সেই নির্বাচনের পরে তিনি ৯ মাসে এলাকায় অনুপস্থিত। তবে উপজেলা নির্বাচনের সময় তিনি তাঁর পছন্দের প্রার্থীর (দলের বিদ্রোহী) পক্ষে প্রশাসনকে ব্যবহার, আর্থিক সহযোগিতা ও ব্যক্তিগত লোকজনকে মাঠে নামানোর জন্য এক দিনের জন্য এসেছিলেন। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর বিজয় ঠেকানো যাবে না বুঝতে পেরে তিনি ঢাকায় ফিরে যান। সেই থেকে তিনি আর এলাকায় আসেননি। কোন নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করেননি। দীর্ঘ দিন পরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কানুদাসকাঠি নিজের গ্রামের বাড়িতে আসেন। নেতাকর্মীদের কোন কিছুই জানাননি। এমনকি সরকারি কোন সফরের চিঠিও ইস্যু করেননি, দলের কোন কর্মসূচিও দেননি। তিনি এসেই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রের কারন দর্শানো নোটিশপ্রাপ্ত মিলন মাহমুদ বাচ্চু ও তাঁর কিছু সমর্থককে নিয়ে বাড়িতে বৈঠক করেন। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও চিঠিতে দাবি করা হয়। চিঠিতে আরো জানানো হয়, তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন, তাই লোক দেখানোর জন্য এলাকায় এসেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খাইরুল আলম সরফরাজ বলেন, সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন কোন জাতীয় দিবসে এলাকায় আসেন না। ১৫ আগস্ট শোক দিবসের কোন অনুষ্ঠানেও তিনি যাননি। নয় মাস পরে এলাকায় আসলেও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রীতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা এমপি হারুনের সঙ্গে সাক্ষাত না করার বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি।

এ ব্যাপরে ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।

তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর নিজ বাড়িতে বৈঠকটিকে তিনি সাংগঠনিক সভা দাবি করে বলেন, আজকে আমি অত্যন্ত আবেগাপ্লুত, এটাই বাস্তব। আমি আসলে আপনারা এতো মানুষ যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন ভাবতেও পারিনি। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, কারণ আমার আসতে একটু দেরি হয়েছে। আবার একদিকে আমি সার্থক। আমি যাদের জন্য করেছি, তারা আমার দেরি দেখে কি করেন দেখার জন্য। আমি কোন সরকারি সফরে আসিনি। আমার স্ত্রীর অনুরোধে একটি মসজিদ দেখার জন্য ব্যক্তিগত সফরে এসেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান যারা হইছেন, তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই। আমি বেঁচে থাকলে দলকে বিভক্ত হতে দোবো না।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন