২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

হজের বিমান ভাড়া: পাত্তাই পেল না ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন ::  বিমান ভাড়া বাড়তি রেখেই চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এবার হজে গমনেচ্ছুদের জন্য রিটার্ন টিকেটসহ বিমানের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা যা আগের বছরের তুলনায়ও ১০ হাজার টাকা বেশি। এয়ারলাইন বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা কমানো সম্ভব। এদিকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলছেন, বিমান ভাড়া কমানোর জন্য অনেক চেষ্টার পরও তিনি বিমান মন্ত্রণালয়কে রাজি করাতে পারেননি। আক্ষেপের সুরে মন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে তার অক্ষমতা না বলে সরকারের অক্ষমতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ভাড়া কমানো সম্ভব বলেও মত তাদের।

জেট ফুয়েলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে হজ ফ্লাইটে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর ফ্লাইটের ভাড়া ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তার পেছনের অন্যতম যুক্তি ছিল জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়া। ওই বছর জ্বালানির দাম বাংলাদেশে এতটাই বেশি ছিল যে অনেক বিমানই ভারত কিংবা অন্যদেশ থেকে জ্বালানি নিয়েছে। তবে জ্বালানির দাম কমায় গত বছর ফ্লাইটের ভাড়া কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

তবে এবার আবার ফ্লাইটের খরচ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। বর্তমানে সৌদি আরবে রিটার্ন টিকেটসহ ভাড়া ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে হজ ফ্লাইটের ভাড়া বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিমানের দাবি, হজ ফ্লাইটে যাত্রীদের সৌদি নামিয়ে খালি ফিরতে হয়, অন্যদিকে আনতে যাওয়ার সময়ও যেতে হয় খালি। তাদের হিসেবে যেহেতু যাত্রীপ্রতি চারবার বিমান উড্ডয়ন করা হচ্ছে সেহেতু ভাড়া সর্বোচ্চ দ্বিগুণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে তা হতে পারে ১ লাখ ১০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

তবে এক্ষেত্রেও বিমানের খরচ অনেকটা কম হওয়ার কথা, কারণ ফ্লাইটগুলোকে এয়ারপোর্টকে টাকা দিতে হয় সেখানে কতজন যাত্রী রয়েছেন তা এবং ওজনের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু হজ ফ্লাইটের চারবার যাত্রার দুইবারেরই যাত্রী থাকছে না। এছাড়া যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করায়ও যে ফি বিমানবন্দরকে দিতে হয় তাও দিতে হচ্ছে না দুইবার। এছাড়া হজ ফ্লাইটগুলো পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরে বিমান তেমন হ্যাংগিং অবস্থায় রাখার দরকার না হওয়ায় এক্ষেত্রেও বেশকিছুটা টাকা বেঁচে যায় এয়ারলাইনগুলোর। এতক্ষেত্র থেকে টাকা বেঁচে যাওয়ায় সৌদি কর্তৃপক্ষকে হজ র‌য়্যালটি ফি দিতে হলেও স্বাভাবিক হিসেবই বলছে বিমান চাইলে যাত্রীপ্রতি টাকা ১ লাখ ১০ হাজারেরও কম নিতে পারে।

বিমান যে ভাড়া হজ যাত্রীদের জন্য নির্ধারণ করেছে তা কমানো সম্ভব বলে মনে করেন এয়ারলাইন বিশেষজ্ঞরাও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পরিচালক নাফিস উদ্দিন ইমতিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া রিটার্ন টিকেটসহ নির্ধারণ করা হলেও যেই টাকা ধরা হয়েছে তা কমানো সম্ভব। আমার হিসেব বলছে, এই ভাড়া থেকে অন্তত ২৫ হাজার টাকা কমাতে পারে বিমান কর্তৃপক্ষ।

তিনি যখন বিমানের পরিচালক ছিলেন তখন রয়্যালটি ফি ১০০ সৌদি রিয়েল ছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে রয়্যালটি যদি বাড়ানোও হয় তবুও বিমানের ভাড়া কমানো সম্ভব। এজন্য বিমানকে অনুরোধ করা যেতে পারে।

ভাড়া কমানোর জন্য বিমানকে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, তারা তাদের অনেক যুক্তি উপস্থাপন করেছে। নানা কারণ দেখিয়ে তারা কোনোভাবেই ভাড়া কমাতে রাজি হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি। আমরা এখনও ইচ্ছা রয়েছে। বিমান ভাড়াটা কমানো হলে সাধারণ হাজিদের উপকার হত।

চেষ্টার পরও মন্ত্রীর বিফল হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিমানের কর্মকর্তাদের দুষছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সাদাত হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এক্ষেত্রে বিমানের টেকনিক্যাল লোকজন নানা যুক্তি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কনভিন্স করে। তারা নানা যুক্তি দেখিয়ে অসহায় করে ফেলে। যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় থাকেন তাদের অসহায় করে ফেলেন।

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, এই বিষয়ে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপেরই দরকার নাই। দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বসেই ঠিক করতে পারেন হজ যাত্রীদের বিমানের ভাড়া।

তিনি বলেন, হজ যাত্রীদের জন্য সাবসিডি দেয়ার দরকার নাই কারণ যাদের সামর্থ্য আছে তারাই যাবে। কিন্তু হাজীদের থেকে বেশি মুনাফা করার মানসিকতারও দরকার নাই, এটাও অনৈতিক। এমনটা করলে মানুষ অন্য বিমানে যাবে। সুতরাং বিমানকে এটার উপর ব্যবসার মনমানসিকতা রাখার দরকার নাই। এমনটা হলে সেটা খুবই নিন্দনীয়। এটার নেগোসিয়েশনের জন্য মন্ত্রীর দরকার নাই, এটা সচিব নেগোসিয়েশন করবেন। এটা বিমানের এমডি লেভেলের কেউ কিংবা সচিবরা ডিল করবেন, মন্ত্রীর ওই লেভেলে যাওয়ারই দরকার নাই। এটা করবে হজ অফিস এবং বিমান অফিস। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদ মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হজে সৌদি আরব যেই খরচ নেয় সেটা তাদের রোজগারের ব্যাপার। তারা এটাকে আয় হিসেবে নেয়। এটা নিয়ে কোনো নেগোসিয়েশনের সুযোগ আছে কিংবা আলোচনা হয় বলে আমার মনে হয় না।

তিনি আরও বলেন, খরচটা কমাতে হবে আমাদের দেশ থেকে। বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্ধারণ করতে হবে ভাড়ার বিষয়টি। সাধারণ হাজিদের কথা মাথায় রেখেই ভাড়া নির্ধারণ করা উচিত।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধ বিমান মন্ত্রণালয়ে পাত্তা না পেলেও মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে সরব হলেই বিমান ভাড়া কমানো সম্ভব বলে মনে করেন ড. সাদাত হোসেন।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন