বরিশাল: ছাত্র কর্ম পরিষদের নির্বাচন মানে একটা উৎসব। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নয় যেন উৎসবের খবর নিয়ে আসে ছাত্র কর্ম পরিষদের নির্বাচন। তবে এ উৎসব বা নির্বাচন থেকে বঞ্চিত বরিশালের তথা দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যেই অনেকেই এখন জানেইনা ছাত্র কর্ম পরিষদ কি?
বেশ কয়েক বছর আগে ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের অর্থাৎ বাকসু’র একটি অস্থায়ী কমিটি তিন মাসের জন্য গঠন করা হয়, এবং বলা থাকে তিন মাস পর নির্বাচনের, কিন্তু সেই অস্থায়ী কমিটি কোন নির্বাচনের মাধ্যমে না হলেও সেই কমিটিই দিনে দিনে স্থায়ীত্ব নেয়। আর যা নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে এ মিশ্র প্রতিক্রিয়ার স্থায়ীত্ব বেশী দিন ঠাই পায়নি কলেজ প্রাঙ্গনে। কারণ যাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বা ক্ষোভ ছিল তারা ধীরে ধীরে পড়াশুনা শেষ করে চাকরীতে মনোনিবেশ করেছেন। তাই যারা বর্তমানে বলতে গেলে নবাগত শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারা জানেই না বাকসু কি? কলা ভবন ১ এর পাশের ভবনটিতে কি হয়? কার স্বার্থে ভবনটি? বলতে গেলে এসব নির্বাচন বা ওই উৎসব না হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন বাকসু নির্বাচনের আশায় থাকা কলেজের ছাত্র নেতারা। বিশেষ করে নির্বাচন না হওয়ায় প্রতিবেদকের কাছে জোড় প্রতিবাদ জানিয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র মৈত্রীর নেতারা।
তবে ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও ক্ষুদ্ধ নির্বাচন না হওয়ায়। তাদের দাবী অধ্যক্ষ’র গাফলতিতে কলেজের ছাত্র কর্ম পরিষদ নিষ্ক্রিয়। তবে কলেজ শিক্ষকদের অভিযোগ রাজনৈতিক চাপটা বা রাঘব বোয়াল নেতাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনের কমিটির ক্ষেত্রে বিএম কলেজের উপর আলাদা দৃষ্টি থাকে, কারণ তারা নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বিএম কলেজের ছাত্র সংগঠন জোরালো ভাবে তৈরী করে। কিন্তু তারা জোরালো ভাবে তৈরী করতে চাইলেও তাদের দ্বন্দে কলেজের ছাত্র সংগঠনগুলোর কমিটি হচ্ছেনা। পাশাপাশি কর্ম পরিষদ নির্বাচনেও কোন উদ্যেগ নিচ্ছে না। এছাড়া এসব নেতারা কলেজ অধ্যক্ষকে নিজেদের পছন্দের লোক কর্ম পরিষদে গুরুত্বপূর্ন পদে আনতে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে থাকেন। যার কারণে সব মিলিয়ে অধ্যক্ষও পারেননা কর্ম পরিষদ গঠনের উদ্যেগ নিতে।
অপরদিকে কলেজের অন্য কিছু প্রভাবশালী শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান অধ্যক্ষ ব্যালেন্স করে সবদিকে ঠিক রাখতে চাইছেন। তাই তার নিজের আখের গোছাতে, শিক্ষার্থীদের দাবী বলি করছেন। জানা গেছে, বাকসু’র নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন একডজন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বিষয়টিতে।
কলেজ ক্যাম্পাস সূত্র মতে, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি না থাকা সত্বেও বাকসু নির্বাচনের আশা ছাড়েননি ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ্ মুনিম, নূর আল আহাদ সাইদী, গোলাম মোস্তফা অনিক (অর্থাৎ যাকে সবাই অনিক সেরনিয়াবাত নামে চিনে), ফয়সাল আহম্মেদ মুন্না, হাবিব বিশ্বাস, কাজী মিলন, রেজভী আহম্মেদ রাজা রাঢ়ী, রুবায়েত সাজ্জাদ পিয়াল, খায়রুল হাসান সৈকতসহ আরো প্রায় অনেক ছাত্রলীগ নেতা। এদের মধ্যে অনেকের মতে, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি কলেজের ছাত্র রাজনীতিতে দরকার, তবে বাকসু নির্বাচন মানেই একটা উৎসব। কিন্তু এ উৎসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমার, শুধু আমরাই নই এ উৎসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। যা মোটেও কলেজের ভাবমূর্তিকে উন্নত করছে না।
এমনই এ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন কলেজ ছাত্রদল নেতা মো. কবির, সোহেল রাঢ়ী, লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু, রুবেলসহ অনেকে। এদের মতে, কর্ম পরিষদের নির্বাচন হলে কলেজে ছাত্রদের অধিকার দৃঢ় এবং শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যা আমাদের এ বিদ্যাপীঠে জরুরী ভাবে দরকার।
অপরদিকে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদল নেতাদের সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা বলছেন কলেজের ছাত্র মৈত্রীর নেতারা। কলেজ শাখা ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জয় চক্রবর্তীর বলেন, বাকসু নির্বাচনের দাবীতে আমরা আন্দোলনের কথা চিন্তা করছি। আর তা না করলে বাকসু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। তাই আন্দোলনের সিদ্ধান্তে শীঘ্রই আসতে পারেন তারা। কলেজ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইমরান নূর নিরবের মতে, আন্দোলন ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়, কারণ ইতিপূর্বের কমিটিগুলোও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই হয়েছিল। তবে এবারে আন্দোলনে নামা অনেকটা কঠিনতর বলে মনে করছেন তিনি। একই দাবী রয়েছে অপর বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নেরও।
তাই শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষায় দিন কাটছে কলেজের ছাত্র নেতাদের। তারা মনে করছেন, কর্ম পরিষদের কমিটি মানে শিক্ষার্থীদের শক্তি, তবে সেই শক্তিই এখন দূর্বল। এরজন্য কলেজের সকল ছাত্র সংগঠনের দাবী বিএম কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের কমিটি দ্রুত থেকে দ্রুততর ভাবে গঠন করা। এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম কয়েকমাস আগে জানিয়েছিলেন, বাকসু’র কমিটি গঠন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। তবে তার সময় এখনো শেষ হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংবাদকর্মীরা।