পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শীত মৌসুম এলেই শুরু হয় জমজমাট গোলের গুড়ের হাট। পৌর শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় প্রতি মঙ্গলবার রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় বসে সাপ্তাহিক এ হাট। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে গোল চাষিরা সিলভারের পাতিলে কিংবা সিলভারের কলসে নিয়ে আসেন এ গুড়।

সারিবদ্ধভাবে শতাধিক চাষিরা পাতিল সাজিয়ে বসেন এ হাটে।   উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর, চাঁদপুর, ইসলামপুর, রজপাড়া,  নাওভাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের এ গোল চাষিরা বছরের অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত গোলের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন গুড়।

তবে তিন প্রকারের গুড়ের দামও তিন ধরনের।  গোলের গাছ থেকে দিনে যে রস সংগ্রহ  করা হয়, তা দিয়ে যে গুড় তৈরি করা হয় এটা ঝড়া গুড় নামে পরিচিত এর দামও তুলনামূলক কম।

অপরদিকে- রাতে যে রস সংগ্রহ করা হয় তা থেকে যে গুড় তৈরি হয় তা মূলত ভাল গুড় হিসেবে পরিচিত। এ গুড়ের দামও তুলনামূলক বেশি।   গোলের গুড়ের স্বাদ কিছুটা লবন বিধায় এর কদর বেশি। সাধারণত লোনা পানির খালে কিংবা বিলে এ গাছ ভাল জন্মায়। তিন ধরনের গুড়ের মধ্যে শক্ত গুড়কে  রোয়া গুড় বলে। এছাড়া পাতলা গুড়কে ভীড় গুড় এবং দিনের সংগ্রহ করা রসের গুড়কে ঝড়া গুড় হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় গোল চাষিদের অভিমত গোলের গুড়ে কোন ক্ষতি নেই। এ গুড় একদিকে কৃমিনাশক, এ ছাড়া এ গুড় লবনাক্ত হলেও এতে প্রেসারের কোন ক্ষতি করে না।  এ গুড় মানুষ চিরা, মুড়ি কিংবা ভাতে বেশি ব্যবহার করে। শীত মৌসুমে এ গুড় তৈরি হয় বিধায় মানুষ অন্য মৌসুমের জন্য মজুদ করে রাখেন।

গোল গাছের পরিচর্যা কিংবা রোগ বালাই নেই বিধায় খরচও তেমন নেই ফলে নতুন করে মানুষ এর চাষাবাদ শুরু করেছে। অনেক স্থান থেকে মানুষ গোল গাছ দেখার জন্য আসেন এই এলাকায়। স্থানীয় চাষি গোপাল চন্দ্র মৃধা,  উত্তম সরকার,  মনিদ্র মিস্ত্রি,  শান্তি রঞ্জন সরকার, নিরঞ্জন তালুকদার, সুখ রঞ্জন মিস্ত্রি, পরিমল হাওলাদার, কেশব চন্দ্র হাওলাদারের বাগানের চাষ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।

প্রতি চাষি মৌসুমের চার মাস গোলের গুড় বিক্রি করে পরিবারের বাড়তি খরচ নির্বাহ করেন। তবে তাঁরা গোল চাষে সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পেলে পরিকল্পনা অনুয়ায়ী বাগান করতে পারে। এতে এলাকার গোল চাষিরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সরকার এ খাত পেতে পারে রাজস্ব।

এ ব্যাপারে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের গোল চাষি গোপাল চন্দ্র মৃধা বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন- গোলের চাষ পরিবারের বাড়তি আয়ের একটি উৎস। তবে সরকারি কোন সুযোগ পেলে এটি বড় অকারের ব্যবসায় পরিণত হতে পারে।’

একই ইউনিয়নের চাদঁপাড়া গ্রামের অধিবাসী শ্যাম লাল হওলাদার বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন- গোলের গুড় লবনাক্ত বিধায় এক সময় মানুষ তা পছন্দ করতো না, বর্তমানে এর চাহিদা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সবিনয় চন্দ্র পাইক বরিশালটাইমসকে বলেন- গোল চাষ কৃষকের মধ্যে নতুন করে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। যা গুড় উৎপাদন ছাড়াও পাতা এবং গাছ দিয়ে নানান ধরণের আববাব পত্র তৈরি সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।’