দুদক কমিশনার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন- ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে আমরা কোনো ছাড় দেবনা। আপনারা সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত শুরু করব। এতে আমরা কোনো কার্পণ্য করবনা।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্যোগে গণশুনানীকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। বুধবার কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের খোলা মাঠে এ গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- দুদকের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. আক্তার হোসেন। অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পটুয়াখালী জেলা দুদকের উপ-পরিচালক কেএম মিছবাহ উদ্দিন, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমান, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, টিআইবির জেষ্ঠ্য কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কাজী শফিকুর রহমান, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাকের আবদুর রব আকন ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু প্রমুখ।

কলাপাড়া উপজেলার ভূমি, দিয়ারা সেটেলমেন্ট, সাব-রেজিষ্ট্রি, পল্লী বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, হিসাব রক্ষণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, সমবায়, সমাজসেবা, উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সেবা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।’

গণশুনানীর সময় কলাপাড়া পৌর শহরের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান আজাদ স্থানীয় সাংসদ মো. মাহবুবুর রহমান কর্তৃক তাঁর পৈত্রিক দুটি ভিটি এবং উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় দুই কানি জমি অন্যায়ভাবে গত ৮ বছর ধরে ভোগ দখল করার অভিযোগ তোলেন।’

এসব জমির জমা খারিচ করে দেওয়ার জন্য তিনি ভূমি অফিসকে দায়ী করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল চন্দ্র দাস এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন- ১৫০ ধারায় লিখিত আবেদন করলে আইনগত দিক খতিয়ে দেখে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

গাজী আব্বাস উদ্দিন নামের টিয়াখালীর এক বাসিন্দা পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় এম এম কোম্পানী কর্তৃক ১৯ একর ৯১ শতাংশ সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে বালু ভরাট করার অভিযোগ করেন। সহকারী কমিশনার (ভুমি) বিপুল চন্দ্র দাস এর উত্তরে বলেন- ইতিমধ্যে বালু ভরাট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তাছাড়া অবৈধ দখলদারদের তালিকাও তৈরি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের বিষয়ে অভিযোগ এনে কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসাদ আল আমিন বলেন- এ অফিসের নৈশ প্রহরী দেলোয়ার হোসেন এবং কর্মচারী বিকাশ ঘুষ গ্রহণ পূর্বক জমির দলিল করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। তা ছাড়া দেলোয়ার ভূয়া সনদ দিয়ে সরকারি চাকুরি করে যাচ্ছে।’’

সাব রেজিষ্টার মো. ফজলে রাব্বি বলেন- যদি তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায় অবশ্যই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেজবাহ উদ্দিন মাননু নামের পৌর শহরের এক বাসিন্দা মিটার না দেখে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা, বছরের পর বছর ধরে মিটার বাবদ ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ নেওয়া এবং সেবার মানের ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক সুদেব কুমার সরকার এর উত্তরে বলেন, মিটার না দেখে বিল করার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমান উপস্থাপন করলে অবশ্যই ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আর সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ নেওয়ার বিষয়টি আরইবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেওয়া হয়ে থাকে।

লালুয়া ইউনিয়নের এসকেজেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জুনায়েত হোসেন খান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক কাম মুদ্রাক্ষরিক মো. নেছার উদ্দিন কর্তৃক ৪৬ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনের যাবতীয় প্রমান গণশুনানীর সময় দুদক কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেন। দুদকের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

গণশুনানীর সমাপনী বক্তব্যে দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দীন আহমেদ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন- আপনারা হালাল রুজি করেন। মানুষজনকে কষ্ট দিয়েন না। মানুষের সেবা করা আপনাদের দায়িত্ব। গণশুনানীতে উপজেলার ১০টি সরকারি কার্যালয়ের সেবার মান নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ যে অভিযোগ করেছে, তা পরিবর্তন করার চেষ্টা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে করার ব্যাপারে তিনি জোর তাগিদ দেন।’’

দুদক কমিশনার কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসকে নাগরিকদের সেবা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত জানিয়ে দিতে রাজশাহীর পবা মডেলে রূপান্তরিত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসারকে জমির দলিল করার আইনকানুন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের জনগণকে জানানোর জন্য বলেন।’

আগামী এক মাস এসব দপ্তরের কার্যক্রম তদারকি করা হবে বলেও তিনি জানান।