ঝালকাঠির রাজাপুরে সিমা আক্তার (২৪) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ গুম করতে বিশখালী নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে রাজাপুর থানায় এজাহার করেছে নিহতের পরিবার। তবে হত্যার ৫ দিনেও গৃহবধূর লাশের সন্ধান মিলেনি।

হত্যা ও লাশ গুমের মামলায় স্বামী মিজান খন্দকার (৩৪) ও তার ভগ্নিপতি মিজান হাওলাদরকে  গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিহত সিমা মিজানের দ্বিতীয় স্ত্রী।

সোমবার স্বামী মিজান খন্দকারও তার ভগ্নিপতি মিজান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে ঝালকাঠি আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।

এছাড়াও এনায়েত গোমস্তা (মিজান খন্দকারের বন্ধু) ও মিজানের মা দোলোয়ারা বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে রাজাপুর থানা পুলিশ।

নিহত সিমা আক্তার পিরোজপুর জেলার খামকাটা গ্রামের মৃত আমজেদ হোসেনে মেয়ে।

মিজান খন্দকার রাজাপুর বাঁশতলা গ্রামের কাশেম খন্দকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত সিমার বড়ভাই মাজেদুর ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে রোববার (০২মার্চ) রাজাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-০১।

আসামীরা হলেন- নিহত সিমা আক্তারে স্বামী মিজান খন্দকার তার ভাই সবুজ খন্দকার তার বোন শাহনাজ বেগম ও তার ভগ্নিপতি মিজান হাওলাদার।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাত ৩টায় উপজেলার সাউথপুর গ্রামে এনায়েত গোমস্তার বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে সিমা আক্তারের সাথে সৌদী প্রবাসী মিজান খন্দকারের বিয়ে হয়। মিজানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী থাকায় সিমা সেই বাড়িতে কখনো আসেনি। গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রা জাপুরে আলাদা বাসাভাড়া করা হয়েছে বলে সিমাকে তার বাবার বাড়ী পিরোজপুর থেকে রাজাপুরে নিয়ে আসে স্বামী মিজান।

সবশেষ ৩০ মার্চ সিমা মুঠোফোনে ভাই বাদশাকে জানান সে বিপদের মধ্যে রয়েছে। এরপর সিমার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।

এর দুইদিন পর ০১ এপ্রিল পিরোজপুর থানা পুলিশ ঢাকা মতিঝিল থানা পুলিশের বরাত দিয়ে জানায়, সিমাকে হত্যা করা হয়েছে এবং নিহতের স্বামী মিজানকে এনায়েতের সহযোগিতায় ঢাকা মতিঝিল থানায় আটক করা হয়েছে।

রাজাপুর থানা পুলিশ জানায়- সিমাকে হত্যা করার পর স্বামী মিজান বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এনায়েতের সহযোগিতায় মতিঝিল থানা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয় মিজান। তাকে রাজাপুর থানায় আনা হয়েছে।

এনায়েতা গোমস্তা ও মিজান দুজনেই সৌদী প্রবাসী ও সেই সুবাদে তারা বন্ধু। হত্যার পরে মৃতদেহ ওই রাতেই এনায়েত গোমস্তার বাড়ী থেকে নিহতের স্বামী মিজান এর বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এতে সহায়তার অভিযোগে মিজান হাওলাদার নামে এক অটোরিকশা চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে মিজান খন্দকারের ভগ্নিপতি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অটোরিকশা চালক মিজান খন্দকার রাজাপুর থানা হাজতে বলেন, সিমা অসুস্থ এই কথা বলে রাত ৪টার দিকে আমাকে অটোরিকশা নিয়ে আসতে বলা হয়। সেই রাতেই অটোরিকশাযোগে সিমাকে উপজেলার সাউথপুর থেকে মিজানের বাড়ী বাঁশতলায় নিয়ে যাই।

এরপর আমার আর কিছু জানা নেই। গত ৫ দিনে নিহত সিমা আক্তারের লাশ উদ্ধারের জন্য সিমার পরিবার ও পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েও তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া এজাহারভুক্ত দুই আসামী মিজান খন্দকার ও মিজান হাওলাদারকে সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বরিশালটাইমসকে জানান, এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। লাশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারলে লাশের সন্ধান ও হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘটন করা যাবে। আমরা বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”